বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের পাঠক ও ক্রেতা পশ্চিমবঙ্গে যেমন বেড়েছে, তেমনি সেখানের পাঠক হৃদয় জয় করছেন এ দেশের লেখকরা। প্রকাশকরা জানান, বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি শুধু কলকাতা নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাভাষী অঞ্চলে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতা-পাঠকদের। এক দশক আগেও পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই পাওয়া দুষ্কর ছিল। এখন তা বেশ সহজলভ্য। কলকাতার বিভিন্ন বইবিতান থেকে শুরু করে পুরো রাজ্যের নানা জায়গায় পাওয়া যায় বাংলাদেশের কবি-লেখকদের নানা ধরনের বই। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় যেমন বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়, তেমনি আট বছর ধরে শুধু বাংলাদেশের বই নিয়ে কলকাতায় আয়োজিত হচ্ছে বাংলাদেশ বইমেলা। সোমবার (২৮ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নওশাদ জামিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির যৌথ উদ্যোগে এবারও কলকাতার বুকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাংলাদেশের বই নিয়ে একটি বইমেলা। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এমন যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ বইমেলা।
এবার বাংলাদেশ বইমেলার নবম আসর। আগামী ১ নভেম্বর কলকাতার মোহরকুঞ্জে শুরু হচ্ছে এ বইমেলা। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ৮২টি প্রকাশনা সংস্থা। বইমেলা শেষ হবে ১০ নভেম্বর। দশ দিনের এ বইমেলায় শুধু বই নয়, পরিবেশিত হবে বাংলাদশের নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উৎসবমুখর এ মেলা ঘিরে কলকাতার পাঠক-ক্রেতার আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে বলে জানান প্রকাশকরা।
জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক, প্রকাশনা সংস্থা অনন্যার প্রধান নির্বাহী মনিরুল হক বলেন, ‘কলকাতার বাজারে এখন নিয়মিত যায় বাংলাদেশের বই। এ ছাড়া বাংলাদেশ বইমেলা ঘিরে সেখানে পাঠক ও ক্রেতার আগ্রহ বেড়েছে। বাংলাদেশের বইয়ের কাটতিও বেড়েছে।’
নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মনিরুল হক বলেন, ‘এক দশক আগেও বাংলাদেশের বই নিয়ে কলকাতার পাঠকসমাজে আগ্রহ কম ছিল। আগে বাংলাদেশের বইয়ের কাটতিও কম ছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। এ দেশের কবি-সাহিত্যিকদের বইয়ের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে।’
জানা যায়, ভাষা ও সংস্কৃতি অভিন্ন বলে পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতা-পাঠকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে এ দেশের সাহিত্যিকদের রচনায়। বিশেষ করে এ দেশের সঙ্গে যাদের নাড়ির সংযোগ রয়েছে, যারা এ দেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের বইয়ের কাটতি বেশি। এ ছাড়া কলকাতার বিদগ্ধ পাঠকসমাজে বৃদ্ধি পেয়েছে এ দেশের কবি-লেখকদের বইয়ের চাহিদা।
আগে বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো গগণেন্দ্র আর্ট গ্যালারির দ্বিতলে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই মেলার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। এবারের বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মোহরকুঞ্জ অর্থাৎ রবীন্দ্রসদনে পশ্চিম দিকের মাঠে।
বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধন হচ্ছে ১ নভেম্বর বিকেল ৪টায়। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে মেলার। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সম্মানিত অতিথি থাকবেন কলকাতা পুরসভার মহানাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ প্রমুখ। কলকাতার উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতিরি সভাপতি ফরিদ আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। শনিবার ও রবিবার খোলা থাকবে দুপুর ২টা থকে সাড়ে রাত ৮টা পর্যন্ত। বইমেলার উন্মুক্ত মঞ্চে থাকবে প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছরই বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানের পাঠক ও ক্রেতারা মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশ বইমেলার জন্য। বইমেলায় যেমন ক্রেতা, পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে প্রকাশনা সংস্থাও। গত বছর অংশ নিয়েছিল ষাটটির মতো প্রকাশনা সংস্থা। এবার তা আশি ছাড়িয়েছে।’
আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান কবি ও কথাসাহিত্যিক বাংলাদেশ বইমেলায় উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই বইমেলায় যাবেন।
চেইন বুক শপ বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘বাংলাদেশের বই কলকাতায় কীভাবে বাজার দখল করতে পারে, আমরা তার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কলকাতা থেকে যে পরিমাণ বই বাংলাদেশে আসে, সেই পরিমাণ বই কলকাতায় যায় না। এটি আমরা সব সময় বলি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নিজেদের বাজার নিজেদেরই তৈরি করতে হয়। আমি সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি, গোটা পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের বড় বাজার সৃষ্টি হবে।’
কয়েকজন প্রকাশক জানান, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে বাংলাদেশের লেখক ও বই সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা। যার ফলে আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঠকও বাড়ছে। মেলার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই বিক্রি করার ব্যবস্থার দাবি জানান প্রকাশকরা।