ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশ - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত সব ধরনের সান্ধ্য কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে ডিনদের নিয়ে গঠিত যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি। গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কাছে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বণিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে কী ধরনের সুপারিশ আনা হয়েছে, সেটি বলতে পারব না। ফাইলটি এখনো খুলে দেখিনি। তবে প্রতিবেদনটি একাডেমিক কাউন্সিলসহ অন্যান্য কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে।’

প্রতিবেদনে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির একাধিক সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য জানান, সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নীতিমালা নেই। সেজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। সে নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সান্ধ্য কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোনো বিভাগে এ ধরনের কোর্স চালু করতে হলে সেটি অবশ্যই নীতিমালার আলোকে ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করতে হবে।

২০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্সের বর্তমান চিত্র এবং সে আলোকে কিছু সপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি করা হয়। কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও সান্ধ্য কোর্স পরিচালিত হয়। এমনকি বিভাগের মৌলিক বিষয়ের বাইরে গিয়েও কয়েকটি বিভাগ ডিগ্রি প্রদান করছে।

গত বছরের মে মাসে পাঁচজন ডিনের সমন্বয়ে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে। অন্য সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান।

প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, কমিটি গঠনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বেশকিছু নির্দেশনা দেয়। সে আলোকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেটি বিশ্লেষণ করে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই করে কমিটি। সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে পর্যালোচনায় উঠে আসা চিত্র এবং সে আলোকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, যেটি এরই মধ্যে উপাচার্যের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি ও পর্ষদ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

২০০২ সালে দেশে সান্ধ্য কোর্স প্রথা চালু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ ধরনের প্রোগ্রাম চালু করতে শুরু করে। বর্তমানে দেশের ২০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন নামে চালু রয়েছে সান্ধ্য কোর্স। যদিও কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের কোর্স বন্ধের কথা বলা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সমাবর্তনে যোগ দিয়ে সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন খোদ রাষ্ট্রপতি। 

এরপর সান্ধ্য কোর্স বন্ধে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বিধায় সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সান্ধ্য কোর্স বন্ধের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইউজিসি। এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি ইউজিসি সবসময় সম্মান করে। তাই আমরা কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা মনে করি, একাডেমিক কাউন্সিল ও ডিনস কমিটিসহ সব পর্ষদই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের বিষয়ে আমাদের চেয়েও আন্তরিক। উপাচার্যের কাছে যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। সেখানে যদি সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি বন্ধের সুপারিশ করা হয়, সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি হোক। এখন শিক্ষকরা যদি সান্ধ্য কোর্স কিংবা কনসালট্যান্সি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে গবেষণার জন্য সময় পাবেন কোথায়? তাই সান্ধ্য কোর্স বন্ধের এ সুপারিশ সিদ্ধান্ত আকারে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার উপকৃত হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সে সিদ্ধান্ত থেকে উৎসাহ পাবে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074419975280762