দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীমউদদীন হলের ক্যান্টিন মালিকের কাছে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে হলটির ১০ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তারা চাঁদা না দিলে ক্যান্টিনের খাবারে নোংরা-আবর্জনা মিশিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ক্যান্টিনের মালিক নাসিরুদ্দিন।
অভিযুক্তরা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক তানভীর হোসেন তুষার, ঢাবি ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক উপ-সম্পাদক ইরতাজুল হক রিয়ান, জসীমউদদীন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর আশিক, সাংগঠনিক সম্পাদক রাইদুল খান কৌশিক, সহসভাপতি তাফসির মাহমুদ চৌধুরী, সহসভাপতি শাহ সুলতান অপু ও আরও দুই নেতা (যাদের শনাক্ত করা যায়নি)।
জানা যায়, গত সপ্তাহে রাত ৪টার দিকে ক্যান্টিনের মালিক নাসিরুদ্দিনকে ‘হল সংসদ’ কক্ষে ডেকে নেন অভিযুক্ত এ নেতারা। এরপর তারা বলেন, ক্যান্টিন চালাতে হলে ঈদের আগে তাদের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। ছোট্ট এ ক্যান্টিন থেকে এত টাকা দিলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে উল্লেখ করে ক্যান্টিন মালিক তাদের কাছে নানাভাবে কাকুতিমিনতি করেন। কিন্তু তারা মালিককে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেন। নানা তদবিরের পর তারা গত শুক্রবার ৬০ হাজার টাকা নিতে সম্মত হন।
ঘটনা প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ইরতাজুল হক রিয়ান বলেন, ক্যান্টিনের খাবারের মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। খাবারে কোনো কোনো দিন চুল পাওয়া যায়, অতিরিক্ত তেল ভেসে থাকে। মাঝেমধ্যে মরা মুরগিও নাকি খাওয়ায়। তাই আমরা সবাই মিলে তাকে বলেছি, খাবারের মান একটু বাড়াতে।
অভিযুক্ত রাইদুল খান কৌশিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। ঘটনা শুনলাম আপনার কাছে।
হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, খাবারের মান তদারকি করতে তাকে একটু ডাকা হয়েছিল। তার কাছে কোনো টাকাপয়সা চাওয়া হয়নি।
শাহ সুলতান অপু বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। ক্যান্টিনের খাবারদাবার নিয়ে আমি কখনো কথাই বলি না। অন্য অভিযুক্তদের একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে জানাব।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঢাবির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে কল দিলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
কবি জসীমউদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান বলেন, এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে এখনো আসেনি। যদি এ রকম ঘটে থাকে, সেটা খুবই দুঃখজনক। হলের পরিবেশ ভালো রাখতে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারাই যদি এ রকম অসহযোগিতামূলক আচরণ করে, তাহলে তা মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের দুদিন পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষার কাছে পাঠানো এক মেসেজে দাবি করেছেন যে, ক্যান্টিন মালিক মো. নাছির উদ্দিন জসীম উদ্দীন হল প্রাধক্ষের কাছে হাতে লেখা এক চিঠিতে প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি ওই সংবাদটির প্রতিবাদও জানিয়েছেন।