রাজধানীর খ্যাতনামা সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর অনেক শিক্ষার্থীই আনন্দিত হয়েছিল। ভেবেছিল, অবশেষে তাদের দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কারণ, দীর্ঘদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তারা মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে সাত কলেজের প্রতি অনেকটা ঈর্ষান্বিত ছিল। তাদের ধারণা ছিল, এতে করে তাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। কিন্তু দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী এই সাত কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন শুরু থেকেই। কেননা এতে লাভের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণই যে বেশি, তা তাঁরা আঁচ করতে পেরেছিলেন।
অধিভুক্তির দেড় বছর পূর্ণ হয়ে গেলেও সাত কলেজের চিত্র রয়ে গেছে আগের মতোই নাজুক। এখনো কলেজ গুলোতে ক্লাস হচ্ছে না নিয়মিত। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও আগের মতোই অপ্রতুল। প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষার্থীর রয়েছ অনেক দূরত্ব। বিষয়ভিত্তিক এবং ব্যবহারিক কোন ক্লাসই হচ্ছে না। দু একটি ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষকগণ তাদের দায়বদ্ধতা শেষ করে দিচ্ছেন। বিজ্ঞান অনুষদের কোন কোন বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস সর্বশেষ কবে হয়েছিল তার হদিসও কেউ দিতে পারবে না। অথচ এ বিষয়গুলোর জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একটি ব্যবহারিক ক্লাস থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের অন্যতম মাধ্যম পরীক্ষা। যেটা হতে পারে বছরের বিভিন্ন সময়ে ক্লাস পরীক্ষা, ইনকোর্স, অর্ধবার্ষিকী ও নির্বাচনী পরীক্ষা। কিন্তু তা না হয়ে বরং একই দিনে দুই চারটি পরীক্ষা নিয়ে কোনভাবে দায়িত্ব শেষ করছেন এসব কলেজের শিক্ষকগণ। যেটা আনুষ্ঠানিকতা ভিন্ন আর কিছুই নয়। অথচ মান উন্নয়নের জন্যই দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে একটি বছর। দেখার বিষয় হচ্ছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কী পেয়েছে আর কী হারিয়েছে। শুধু বছরান্তে ঢাবির লোগোসংবলিত খাতায় পরীক্ষা নিলেই কি শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়ে যায়?
ঢাবির অধিভুক্ত হলেও কলেজগুলোতে এখন পর্যন্ত কোন সিলেবাস প্রণয়ন করেনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসেই চলছে সাত কলেজের চাকা। এর মধ্যেও আবার গলদ রয়েছে কোথাও কোথাও। সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা নিয়ে আছে অনেক অভাব অভিযোগ। প্রশ্নপত্রে নিয়মমাফিক সিলেবাস মানা হচ্ছে না। অর্থাৎ অবস্থাটা এতটাই নাজুক হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা না পারছে ঢাবির সিলেবাস অনুসরণ করতে এবং না পারছে জাবির সিলেবাস অনুসরণ করতে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে হতাশায় ভুগছে অনেক শিক্ষার্থী। প্রশ্ন হচ্ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সুদিন আসবে কবে?
সাত কলেজ সংকট বহুদিনের আলোচ্য বিষয়। আর এর সাথে জড়িত প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এ ব্যাপারে অচিরেই যথোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা। শিক্ষার মানোন্নয়নে নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষার বিকল্প নেই। এজন্য প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে শতভাগ ক্লাস নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রশাসন দিয়ে এতসব নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই সাত কলেজ নিয়ে যদি আলাদা ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়, তাহলে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে খুব দ্রুত গতিতে। যেহেতু ঢাবি সদিচ্ছায় সাত কলেজকে অধিভুক্তি নিয়েছিল, তাই এখন ঢাবিকেই এর দায়ভার নিতে হবে। সিলেবাস প্রণয়নসহ শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সাত কলেজের শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে হবে। অন্যথায় এসকল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]