দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে আসা সেই প্রেমাকান্তকে 'মারধরের' অভিযোগের সত্যতা পায়িনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, দেখা করতে আসা প্রেমিকার সঙ্গে গাড়িতে বসে খারাপ আচরণ করায় দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় স্থানীয়রা সেটি সমাধানের চেষ্টা চালায়। উত্তেজিত প্রেমকান্তকে অটো থেকে নামানোর চেষ্টা করেন তারা। মূলত দেখা হওয়ার পর পরই কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল প্রেমকান্ত। একইসঙ্গে তার সঙ্গে কিশোরীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। আর সে কারণেই কিশোরীর সাথে সর্ম্পকের অবনতি হয় প্রেমকান্তর।
স্থানীয়রা ভারতীয় নাগরিক দেখে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করলে আত্মরক্ষার্থে মিথ্যার আশ্রয় নেন প্রেমকান্ত। অভিযোগ তোলেন মারধর ও টাকা, মোবাইল নিয়ে যাওয়ার। প্রেমকান্তের এসব অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেশ হালদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রেমকান্তের অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমরা দেখেছি। কিন্তু তদন্তে তার করা অভিযোগুলো অসত্য বলে উঠে এসেছে। মূলত কাশিপুরের সড়কে যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলছেন, সেখানে ওই যুবকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। তাকে কেউ মারধর করেনি। স্থানীয়রা তাকে থানায় হস্তান্তর করার পরে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হয়েছে। হাই কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তার দেশে চলে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা দিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রেমকান্ত নামে ওই যুবক বার বার আমাকে বলছিলেন, সেই কিশোরীকে তার সঙ্গে পাঠানোর জন্য। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে বাংলাদেশে আইন পরিপন্থি কাজ বলার পরও একই দাবি করছিলেন তিনি।
এদিকে গত শুক্রবার বরগুনা জেলার তালতলী থানায় প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার কথিত প্রেমিকার বাবা। সেখানে তাদের দুজনের প্রেমে ফাটল ধরার কারণ স্পষ্ট। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধু হয়ে ২৪ জুলাই প্রেমকান্ত বরিশালে চলে আসেন। ২৫ জুলাই একটি রেস্তোরাঁয় ওই কিশোরী তার তিন বান্ধবীসহ দেখা করে দুপুরের খাওয়া শেষে চলে যায়। এরপর প্রেমকান্তের অনুরোধে ২৭ তারিখ কাশিপুর এলাকায় দেখা করে।
সেখানে অটোরিকশার মধ্যে প্রেমকান্ত ওই কিশোরীকে 'খারাপ সর্ম্পক' স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। একইসঙ্গে তার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ওই ছাত্রী প্রেমকান্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে দুজনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা মারাত্মক রূপ নেয়। তাদের বহনকারী গাড়িটি থামিয়ে স্থানীয়রা বাগবিতণ্ডা বন্ধ করে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন বিমানবন্দর থানায় জানায়। সেখান থেকে পুলিশ এসে প্রেমকান্তকে তাদের হেফাজতে নেয়।
কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক তা এয়ারপোর্ট থানার ওসি নিজে কলেজে এসে নিশ্চিত হয়ে গেছেন। সে বিষয়টি হাই কমিশনে জানালে, হাই কমিশন ওই যুবককে দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সে দেশে না ফিরে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আমার পরিবার নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়ে যায়। এমনকি সেসব অপপ্রচার টেলিভিশন ও পত্রিকাতেও বলেছে। ফলে আমি আমার পরিবার নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকব, তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওই যুবকের মিথ্যা তথ্যে আমরা মারাত্মক ক্ষতিতে রয়েছি। আমরা এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
প্রেমকান্তের কথিত প্রেমিকা দাবি করেছেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। আমি তার প্রেমিকা না। আসলে তার কথায় রাজি না হওয়ায় আমার ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে।
তালতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভারতীয় ওই যুবকের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দেয়া ও তাকে চাপ সৃষ্টি করে নিয়ে যাওয়ার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যদি এমন ঘটনা তিনি ঘটান তা অবশ্যই অপরাধ। আমরা অভিযোগটির তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে প্রেমকান্ত বলেন, তালতলী থানায় যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, আসলে এমন কোনো আচরণ আমি করিনি। তার সঙ্গে হোটেলে, কলেজে এবং কাশিপুর চৌমাথায় দেখা হলেও খারাপ কোনো প্রস্তাব দেইনি।