তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কেন পরীক্ষা থাকবে না? - দৈনিকশিক্ষা

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কেন পরীক্ষা থাকবে না?

মো. আবুল বাশার হাওলাদার |

শোনা যাচ্ছে, প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের বিবৃতিতে জানা যায়, এ সিদ্ধান্ত শিগগিরই কার্যকর হচ্ছে। তবে আমার প্রশ্ন কেন এ সিদ্ধান্ত? এর কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও শিশুদের ওপর থেকে বোঝা কমানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত হতে পারে। শিশুদের পড়ালেখা হালকা করার জন্য মনে হয় এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কোনো পর্যবেক্ষণ বা সমীক্ষার ফলাফল কি না আমার জানা নাই। তবে এ সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিয়েছে বা কার সিদ্ধান্ত তা অস্পষ্ট। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত মুখে আসলেই বলা যায় না। শত বছর ধরে পরীক্ষা পদ্ধতি চলে আসছিল আর তা বন্ধ করা এত সহজ নয়।

আমাদের শিশুরা এখন আর অবুঝ নয়। তারা এখন অনেক কিছু বোঝে। প্রথম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী যার বয়স ৭ বছর সে সবই পারে; নাচতে-গাইতে পারে, কম্পিউটার-মোবাইল চালাতে পারে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিতে পারে, ফুটবল-ক্রিকেট-দাবা খেলতে পারে, কি পারে না, তা আমার জানা নাই। সে আবৃত্তি করতে পারে, গল্প বলতে পারে, অসুস্থ মায়ের সেবা করতে পারে। পরীক্ষা তো তার কাছে সহজ ব্যাপার, আনন্দের ব্যাপার। আমরা এ বয়সে সেজেগুজে পরীক্ষা দিতে যেতাম। ভালো ভালো খাবার খেতাম। আবার ফলাফল প্রকাশ করার সময় আরও আনন্দ পেতাম; এ যেন এক উৎসব ছিল। 

পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোনো শিশু কোনোদিন কান্না করেনি বা অনীহা প্রকাশ করেনি। বরঞ্চ নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাই বলা যায়, পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্জন কল্পনা করা যায় না। পরীক্ষা হলো শিখনফল মূল্যায়নের পদ্ধতি। এর বিকল্প কিছুই ভাবা যায় না। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না থাকলে শিশুর কী কী লাভ হবে আর পরীক্ষা থাকলে কী কী ক্ষতি হবে তার সঠিক সমীক্ষা ও গবেষণা হওয়া দরকার। সব শ্রেণিতেই পরীক্ষা থাকতে হবে। এবং তা হতে হবে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা। তবে উন্নত বিশ্বে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়ন থাকছে।

বাংলাদেশে কোনো শ্রেণির পরীক্ষা বন্ধ করার বাস্তবতা এখনো নেই। এখানে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নেই, শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত নয়, অবকাঠামোগত সমস্যা আছে, আমলা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান, শিক্ষকের মর্যাদা নেই, শিক্ষা আইন নেই। এখানে পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়া হবে আত্মঘাতী কাজ।

আমি পরীক্ষার পক্ষে কেন তা এখন বলতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীরা পড়তে চায় না, তা যে কোনো ক্লাসেই হোক। পরীক্ষা না থাকলে নিয়মিত ক্লাসে আসবে না। অন্য সময় পড়ালেখা না করলেও পরীক্ষার সময় কঠোর পড়ালেখা করে। এখানে পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়ালেখা বিদ্যমান। কারিকুলাম, সিলেবাস তৈরি করা হয় পরীক্ষার ধরন ও সময় অনুযায়ী। পরীক্ষার সাথে পড়ালেখা শব্দটি এত সম্পৃক্ত যে একটা থেকে অন্যটা আলাদা করা যায় না। তাই পরীক্ষা বন্ধ করা সমীচীন হবে না।

লেখক : মো. আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003666877746582