থানার বহুতল ভবন হচ্ছে শিশুদের খেলার মাঠে - দৈনিকশিক্ষা

থানার বহুতল ভবন হচ্ছে শিশুদের খেলার মাঠে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর কলাবাগান এলাকার তেঁতুলতলা মাঠ। মাঠের প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে সারাক্ষণই চলে শিশুদের ছুটোছুটি। শনিবার বিকেল মাঠে গিয়ে দেখা যায় নয়-দশ বছর বয়সী তিনজন শিশু পুরোনো একটি ফুটবল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। এতেই যেন তাদের সব আনন্দ। কিন্তু ইট-পাথরের শহরে তেঁতুলতলার একটুকরো মাঠে শিশুদের এই আনন্দ আর বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব শিগগিরই মাঠে গড়ে তোলা হবে কলাবাগান থানার নিজস্ব একটি বহুতল ভবন। এরইমধ্যে মাঠে ভবন তোলার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কলাবাগান থানা।

মাঠে নিয়মিত খেলতে আসে লেক সার্কাস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিয়াত বললো, ‘করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা সকাল এবং বিকেলে এ মাঠে খেলতে আসি প্রতিদিন। আমাদের মতো অনেকেই আসে। শুনছি এখানে বিল্ডিং তুলবে, যদি বিল্ডিং তোলে আমরা খেলবো কোথায়। আমাদের খেলার জায়গা কই?’

স্থানীয়রা জানান, মাঠের পশ্চিমাংশে স্থানীয়দের জন্য পানির পাম্প স্থাপন করা হয়েছে অনেক আগে। এতে মাঠের স্থান সংকুচিত হলেও স্থানীয়দের স্বার্থে কেউ প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু এখন মাঠের একাংশে অস্থায়ী পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এতে বাধা দিলেও কেউ কোনো কথা শুনছে না। উল্টো এ সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে ব্যস্ত থাকা বাসিন্দাদের সামনে পুরো মাঠই দখল হয়ে যাওয়ার সমস্যা আর্বিভূত হয়েছে।

তারা বলছেন, এ মাঠে এলাকার অনেক কিশোর-যৌবন কাটিয়ে বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু অর্ধশত বছর ধরে মাঠ হিসেবে পাওয়া এ তেঁতুলতলা মাঠটি রাতারাতি বেদখল হয়ে ভবন নির্মাণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বাসিন্দারা প্রতিবাদ-মানববন্ধনও করেছেন। 

তেঁতুলতলা মাঠেই নিজের শিশু-কিশোর বয়সের স্মৃতিচারণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না নামের একজন মাঝবয়সী নারী। তিনি বলেন, ‘এ মাঠে আমাদের ছোট বেলা কেটেছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মাঠটি একেবারেই সবুজ ছিল। এ মাঠে আমাদের কত শৈশব স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কত সুন্দর ছিল সেসব দিনগুলো। এ মাঠেই প্রতিবছর ঈদের জামাত হতো, এটি ঈদগাহ হিসেবেও পরিচিত। তাই আমাদের প্রাণের দাবি এ মাঠে যেন কোনো স্থাপনা তৈরি না হয়। আমাদের দাবি মাঠটি যেন খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি মো. আবু নাছের  বলেন, ‘মাঠের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ হবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। যেখানে মাঠের খোঁজে সরকার দিশেহারা, সেখানে বিদ্যমান থাকা মাঠেই ভবন নির্মাণ কিভাবে করতে পারে সেটাই বোধগম্য নয়। যারা একাজে জড়িত তাদের অবশ্যই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র  বলেন, ‘আমি আজ এই থানার ওসি আছি, কাল হয়তো অন্য থানায় বদলি হবো। সুতরাং মাঠটিতে ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা যদি মনে করে আমি জড়িত তাহলে ভুল ধারণা এটি। কারণ আমাদের থানার জন্য ভবন করা হলেও এতে আমাদের কোনো হাত নেই। জেলা প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরাই বিষয়টির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের যদি কারো কোনো দাবি থাকে তা অবশ্যই জানাতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানায়নি।’

বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন জানালে ওসি পরিতোষ চন্দ্র বলেন, ‘মানববন্ধন করার কথা শুনেছি, কিন্তু সেটি নাকি কোনো স্বার্থান্বেষী মহল জায়গাটি দখলের অপচেষ্টার উদ্দেশ্যে করেছে।’

মাঠে ভবন নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা-১০ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমান  বলেন, ‘মাঠটি জনগণের প্রয়োজন। আবার থানাও জনগণের প্রয়োজন। তাই জনগণের দাবির বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন মাঠ কি মাঠের জায়গায় থাকবে নাকি মাঠের জায়গায় ভবন নির্মাণ হবে। কারণ দুটোর মালিকই কিন্তু সরকার।’

মাঠে থানা করার বিষয়ে স্থানীয়দের বাধার বিষয়ে ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘জনগণ চাচ্ছে মাঠটা মাঠের জায়গায় থাকুক। আর থানা অন্য জায়গায় বসানো হোক। তো জনগণের দাবি অনুযায়ী থানাটা কি তাহলে রাস্তার ওপর বসিয়ে দিবো?’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মাঠটি বিহারি কোনো এক ব্যক্তির। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশ ত্যাগ করেছিলেন। যে কারণে মাঠটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রাজউকে অন্তর্ভুক্ত। তবে মাঠের জায়গায় কলাবাগান থানার স্থাপনা নির্মাণ হবে কিনা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। তিনি  বলেন, ‘বিষয়টা আমি আগে শুনিনি, আপনার থেকেই শুনলাম। অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034680366516113