ফরিদপুর জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অভিযোগে এবং পরীক্ষা বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন প্রতিবাদকারীরা। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের তদন্ত দাবি করে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষে।
জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর সকালে শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয়ে একসঙ্গে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় ওই দুটি বিদ্যালয়ে ৪৭৯টি আসনের বিপরীতে তিন সহস্র্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ওইদিনই খাতা দেখে রাতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় স্ব স্ব বিদ্যালয় থেকে।
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ চলাকালে ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম তুলে ধরে বক্তব্য দেন অভিভাবক বিমল তুলসিয়ান আগরওয়ালা, স্বপ্না ইসলাম, সাহাদাত কবির, দীপক আঢ্য, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ মাসুদ রানা, সুইট মিয়া, দীপক কুমার দাস, অরবিন্দ সাহা, বিপ্লব কুমার শর্মা প্রমুখ।
স্বপ্না ইসলাম বলেন, তার ছেলের ভর্তি পরীক্ষার খাতায় শুদ্ধ উত্তরও কেটে দিয়ে নম্বর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি সেই খাতার ছবি তুলে এনে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দেখান।
সাহাদাত কবির নামে একজন অভিভাবক বলেন, রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় তার মেয়ের নাম উত্তীর্ণদের তালিকায় ঘোষণা করা হলেও সকালে প্রকাশিত ফলাফলে মেয়ের নাম পাননি। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন।
তৃষাণজিৎ সরকার নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে নির্ভুল একশ নম্বরের উত্তর দেয়। কিন্তু তাকে ৮৪ নম্বর দেয়া হয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, যেসব শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করিয়েছেন তারাও পরীক্ষার হলের দায়িত্বে ছিলেন। আর পরীক্ষার খাতা দেখায় চরম অনিয়ম করা হয়েছে। অনেকের খাতা না দেখেই নম্বর বসিয়ে দেয়া হয়েছে। শহরের মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীই এতে বাদ পড়েছেন। দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিটি ডেপুটি কালেক্টর নেজারতের (এনডিসি) হাতে তুলে দেন।
অর্ধশত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অভিভাবকদের অনুরোধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খাতা দেখালে তাতে দেখা যায়, যে সমস্ত শিক্ষার্থী ১০০ নম্বর পেয়েছে তাদের বিভিন্ন কৌশলে বাদ দিয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো অনিয়ম ফরিদপুরবাসী মানবে না। প্রশ্নবিদ্ধ ভর্তি পরীক্ষার ফল স্থগিত করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
এ বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শেখ মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, স্মারকলিপি দিয়েছে। ‘এ কথা সত্য অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বাদ গেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে পরীক্ষায় কোন অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।