বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী পরিচালক ও সহকারী সচিব পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপে আটকে গেল।
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ইউজিসি কার্যালয়ে এ নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা উপস্থিতও হয়েছিলেন। তবে সকাল ১০টার আগেই দুদকের মহাপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে টেলিফোন করে নিয়োগ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। পরে 'অনিবার্য কারণে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত' করার নোটিশটি জানিয়ে দেওয়া হয় প্রার্থীদের।
জানা গেছে, ইউজিসির সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদের মেয়ে সাদিয়া শারমিন সিনথিয়া সহকারী পরিচালক পদে প্রার্থী থাকার পরও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সচিব সরাসরি সম্পৃক্ত হন। নিজের মেয়ের প্রার্থিতার বিষয়টি গোপন করে নিয়োগ কমিটিতে নিজের নাম লেখান। তিনি পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর খাতা মূল্যায়নসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া থেকে ইউজিসির একজন সদস্য বাদে বাকিরা সরে যান।
ইউজিসির সূত্র জানায়, লিখিত পরীক্ষার খাতা দুদকের পক্ষ থেকে জব্দ করা হতে পারে। ইউজিসির একজন সদস্য ও একজন পরিচালক পুরো ১২০৪টি খাতা দেখেছেন। এতে ৬টি পদের বিপরীতে মাত্র ১৮ জন পাস করেছেন। এবার আড়াই হাজার প্রার্থী আবেদন করলেও মাত্র ১২০৪ জনকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। ঠুনকো অভিযোগে বাকিদের বাদ দেওয়া হয়। অতীতে অন্যান্য নিয়োগের সময় ইউজিসিতে কমিশনের সদস্যরা সবাই খাতা দেখতেন। এবার তা হয়নি।
গত ১৫ জানুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। অভিযোগ বিষয়ে ইউজিসির কাছে দুদক ব্যাখ্যা চাইলেও এখনও সাড়া দেয়নি উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি।
প্রার্থীদের অভিযোগ, অনুগত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির অধীনে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি এবং খাতা দেখার কাজ করেন সচিব। মেয়ের পাস নিশ্চিত করতে কমিশনে তার অনুগত ব্যক্তিকে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় সচিবের মেয়ে পাসও করেন।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, নিজের মেয়ের চাকরিপ্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সচিব তাকে অবহিত করেননি। তিনি বলেন, আইনে বাধা না থাকলেও কারও সন্তান বা আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হলে নৈতিক কারণেই তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকেন না। ইউজিসির সচিব খালেদ অবশ্য কাছে দাবি করেছেন, তিনি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো পর্যায়ে কোনো প্রভাব বিস্তার করেননি। তিনি দাবি করেন, তার কন্যা যে আবেদনকারী, তা তিনি আগেভাগে ইউজিসি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। তবে আগেও একবার মেয়েকে নিয়োগের প্রচেষ্টা চালান এই সচিব।