দেশপ্রেমের বোধ তৈরি করতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

দেশপ্রেমের বোধ তৈরি করতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমরা যত উন্নত হচ্ছি, আমাদের কর্মপরিধি তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাত্রার মানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মসংস্থনের প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছে। এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বাড়লেও পরিবারে সন্তানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি যে হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তদুপরি কর্মের প্রয়োজনে স্থায়ীভাবে একই জায়গায় দীর্ঘদিন বসবাস করা সম্ভবপর হয় না। একই কারণে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে পারিবারিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ কমে যাচ্ছে। যৌথ পরিবারে মা-বাবা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুফু সবাই মিলে একইসঙ্গে একই পরিবারে বড়ো হলে একে- অন্যের প্রতি স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা জন্ম নেয়। একইসঙ্গে সম্মান-শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধও পরিবার থেকে জন্ম নেয়। গ্রামীণ সমাজে এক পরিবারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অন্য পরিবারের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের সুযোগ বেশি। একজনের সুখে-দুঃখে অন্যজন এগিয়ে আসতে পারে। সেই তুলনায় শহুরে ব্যস্ত জীবনে প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ কম। কেউ কারো খোঁজ নেওয়ার সময় পায় না, এমনকি প্রতিবেশীকে চেনেই না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। শনিবার (২৭ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন জয়িতা শিল্পী।

যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠলে সন্তানরা পরিবারের মধ্যে শিষ্টাচার অনুশীলনের সুযোগ পায়। ছোটোরা বড়োদের মান্য করবে, সম্মান করবে এবং বড়োদের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে, এটা পারিবারিক ও সামাজিক নীতি। তেমনি বড়োরা ছোটোদের স্নেহ করবে, ভালোবাসবে এবং একইসঙ্গে শাসন করবে—এটাই পারিবারিক ও সামাজিক প্রথা। যৌথ পরিবার ভেঙে একক ও ক্ষুদ্র পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক এসব শিষ্টাচারের চর্চা কমে আসছে। বাবা-মা দুজনেই কর্মব্যস্ত থাকায় সন্তানকে সময় দিতে না পারায় বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আগ্রহ ও জ্ঞানের ঘাটতি থাকে। অন্যদিকে সন্তান একা একা বড়ো হতে থাকলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মে না। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ জন্ম নেয়। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে একসময় সন্তান হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং নানাভাবে বিপথগামী হতে থাকে। অনেক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন কুসঙ্গে মিশে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মা-বাবার প্রতি তাই সন্তানকে কোনোমতেই হতাশাগ্রস্ত হতে দেওয়া যাবে না। বাবা-মা যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। সন্তানের খাবার, পড়াশোনা, সন্তান কখন বাসা থেকে বের হয়, কোথায় যায়, কখন ফেরে—এসব ব্যাপারে বাবা-মাকে সব সময় নজরদারি রাখতে হবে। সন্তান যাতে বুঝতে পারে, বাবা-মা ও অভিভাবকগণ তাদের প্রতি উদাসীন নন। হতাশায় ডুবে গেলে সন্তানের বিপথে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তখন তারা বিষণ্নতায় ভুগতে থাকে। কখনো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে কিংবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদের মনোভাব তৈরি হয়। এমনকি জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বা ঘৃণা জন্ম নেয়।

তাই মা-বাবা যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, নিয়মিত সন্তানের খোঁজ-খবর নেওয়া খুবই দরকার। তারা কখন কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কী করছে—সব সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। দিনে একটি বেলা অন্তত পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে খেতে বসা উচিত। খাবারের টেবিলে সবার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা যায়, খোঁজ-খবর নেওয়া যায়। এতে করে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়। একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ বাড়ে। এছাড়া পারিবারিক যেসব শিষ্টাচার আছে যেমন—ছোটোরা বড়োদের সালাম দেবে, নম্রভাবে কথা বলবে, তর্ক করবে না, শ্রদ্ধার সঙ্গে কথার উত্তর দেবে, বড়োদের জন্য আসন ছেড়ে দেবে—এসব সাধারণ শিষ্টাচার। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, এখনকার ছেলেমেয়েদের এসব সৌজন্যমূলক আচরণের চর্চা একেবারেই কম পরিলক্ষিত হয়। পরিবারের ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া ইত্যাদি প্রবণতাও কম পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে ব্যক্তিগত বিষয়ের প্রতি সবাই নিমগ্ন থাকে। এ থেকে স্বার্থপরতার চিন্তা জন্ম নেয়। উদার হওয়া বা কোনো কিছু ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার মানসিকতা লোপ পায়। দেশপ্রেম তৈরির এটিও একটি উপাদান। নিজের পরিবার থেকে ভালোবাসা বা প্রেমের উত্সরণ ঘটে। বাবা-মা, ভাই-বোন—এদের ভালো না বাসলে বন্ধুবান্ধবকে ভালোবাসা কি আদৌ সম্ভব? আর দেশকে ভালোবাসার জন্য তো দেশপ্রেমের বোধ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। সহজ কথায়, স্বাভাবিকভাবে যা হওয়া দরকার, সেটাই বাঞ্ছনীয়।

আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মূল্যবোধের চর্চা থাকলে সন্তান সেটি অবশ্যই অনুসরণ করবে। তেমনি অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলা থাকলে সন্তানের মনে সেটিরও প্রভাব পড়ে। আমাদের সবার প্রতি মায়া-মমতা ও ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করতে সবার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। বেশি বেশি ভালোবাসার দরজা তৈরি করা প্রয়োজন, যেখান থেকে ভালোবাসার অনুপ্রবেশ ঘটবে। আসুন আমাদের সন্তানদের মানুষকে ভালোবাসতে শেখাই, আমরা আমাদের সন্তানদের ভালোবাসি এবং তাদের সুনিশ্চিত ভবিষ্যত্ গড়ে তুলি।

লেখক : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন)

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049018859863281