নকল ঠেকানোসহ কয়েকটি শর্তে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা ও ভর্তির অনুমতি পেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দূরশিক্ষণ বা অনলাইনে শিক্ষাদানে নকল বা অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করার অভিযোগ পুরনো। নর্থসাউথসহ অনেক নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ পুরনো। স্বাভাবিক সময়ে নিজেদের মতো করে নেয়া পরীক্ষায়ও নকল বা টোকাটুকি চলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এই কথা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনেরও (ইউজিসি) মনে আছে। তারা এটি মনে করিয়ে দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও। অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট করে ইউজিসি বলেছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আজ (৭ মে) একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে ইউজিসি। গাইডলাইনে একথা বলা আছে।
করোনা ভাইরাসে (কোভিড ১৯) পরিস্থিতির বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে গাইডলাইন দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা করেছে তাদের দুটি বিকল্প নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।
প্রথম বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করবে।
দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চলমান সেমিস্টারে তত্ত্বীয় কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে রেজিস্ট্রিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ওই সব বিষয়ের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি (যা ৩০ শতাংশের মতো) সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে অনলাইনের কার্যক্রম শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্লাস উপস্থিতি, পারফরমেন্স, কাস টেস্ট, মিডটার্ম পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে যে মূল্যায় করা হয়েছে তার নম্বর এবং অনলাইনের পঠিত অংশের উপর এসাইনমেন্ট, কেস স্টাডি, ভাইভা (ভিডিও ডিভাইস অন থাকা অবস্থায়), ভার্চুয়্যাল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আগের সেমিস্টারগুলোর ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সব ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে। ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস গ্রহণ, এর উপর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে।
বিকল্প প্রস্তাব দুটির যে কোনো একটি গ্রহণ করতে হলে চলমান সেমিস্টারে অনলাইনে নেয়া ক্লাসে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে হবে।
যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করতে পারেনি বা নিকট ভবিষ্যতেও শুরু করার পরিকল্পনা নেই সে সব বিশ্ববিদ্যালয় অসমাপ্ত ক্লাস, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কী পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করবে তা একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি ও পরিকল্পনা লিখিতভাবে আগামী ১৭ মের মধ্যে জানিয়ে অনুমোদন গ্রহণ করতে বলেছে ইউজিসি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে গাইডলাইন প্রণয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।