এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ঢাকার নটর ডেম কলেজের বাণিজ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের চেয়ে বিজ্ঞানের ছাত্ররা এগিয়ে আছেন। কলেজ অধ্যক্ষের মতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়টি বুঝতে অসুবিধার কারণে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ফল খারাপ হয়েছে।
এই কলেজে এবার ৩ হাজার ৭৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩ হাজার ৫৪ জন পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৫৭ জন। এই কলেজে এ বছর পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
আজ রোববার সারা দেশে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। এ বছর দেশের ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। পরীক্ষার ফলাফলে পাসের দিক থেকে হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে আছেন। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্য এগিয়ে আছেন ছাত্ররা।
নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৯৭৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৭৬ জন। এ বিভাগে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯০ ভাগ।
মানবিক বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪২০ জন। পাস করেছেন ৩৯৯ জন। মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ জন। এ বিভাগে পাসের হার ৯৫ শতাংশ।
বাণিজ্য বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৬৮২ জন। পাস করেছেন ৬৮২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬১ জন। এ বিভাগে পাসের হার ১০০ শতাংশ।
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিয়ুস রোজারিও বলেন, ‘সারা দেশেই পাসের হার কম। সে তুলনায় এ কলেজে ছাত্রদের ফল ভালো। বিজ্ঞান বিভাগের ফলও ভালো হয়েছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়টিতে গাণিতিক কিছু অধ্যায় থাকায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রদের ফল খারাপ হয়েছে।’
অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সৃজনশীল পদ্ধতিতে উত্তরপত্র নতুনভাবে মূল্যায়নের কথা বলেছেন। যার কারণেও ফল খারাপ হতে পারে। তিনি মনে করেন, নতুনভাবে মূল্যায়ন করার ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রী যদি আগেই জানিয়ে দিতেন, তা হলে শিক্ষার্থীরা আগেই জানত এবং প্রস্তুতি নিতে পারত।
আজ নটর ডেম কলেজে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার ফল জানতে সকাল থেকেই কলেজে আসতে ভিড় জমাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে আগে থেকেই ফল জেনে নিয়েছেন। তবে সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দ করতে কলেজে এসেছেন সবাই।
মনোয়ারা বেগমের ছেলে নুরুল ইসলামও আগে থেকেই মোবাইলের মাধ্যমে ফল জেনেছেন। তারপরও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপন করতে কলেজে এসেছেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ায় মা-ছেলে দুজনেই আনন্দিত। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলে কষ্ট করেছে তাই ভালো ফল করেছে। কষ্টের ফল পাওয়ায় আমি খুব খুশি।’
একই রকম আনন্দিত চৌধুরী খুররম ইবনে জহিরের মা হাসিনা আক্তার এবং বাবা মো. জহির উদ্দিন। তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
বাণিজ্য বিভাগের নাজিমুল জিপিএ-৫ পেলেও বাংলায় জিপিএ-৫ পাননি। তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই ইচ্ছা মানবিক বিভাগের শাহনেওয়াজ, সাদ্দাম হোসেন ও নেয়ামত উল্লাহর। এ বিভাগে জিপিএ-৫ সবচেয়ে কম। তাঁরা ভালো পড়েও জিপিএ-৪ পেয়েছেন। তবে সামনে তাঁদের আরও বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁদের আশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এই ফলাফলের খারাপ লাগা দূর করবেন।