নতুন কারিকুলামে ‘মূল্যায়ন’ : শনিবার দুপুরে এনসিটিবি- শিক্ষা বোর্ড বৈঠক - দৈনিকশিক্ষা

নতুন কারিকুলামে ‘মূল্যায়ন’ : শনিবার দুপুরে এনসিটিবি- শিক্ষা বোর্ড বৈঠক

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: আগামী শনিবার দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দেশের সব শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরই  মধ্যে ‘পাবলিক পরীক্ষায় কীভাবে মূল্যায়ন হতে পারে’ শিরোনামে একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে এনসিটিবি। বৈঠকে সেই প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে।

এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় নতুন কারিকুলামের বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন এবং পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও মনোন্নয়নের বিষয়ে একটি সভা হয়। এতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করার সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 

নতুন কারিকুলাম, পাঠ্যবই ও মূল্যায়ন পদ্ধতি : নতুন কারিকুলামের মূল কথা হচ্ছে- অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন। কারিকুলামে প্রতিটি বিষয়ের জন্য কিছু শিখনযোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে। যোগ্যতা বলতে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের

সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের অধীন পাঠ্যবইগুলো তৈরি করা হয়েছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়ার উপযোগী করে। স্বভাবতই বইগুলোকে তত্ত্বভারাক্রান্ত না করে জোর দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসু করে তোলার প্রতি। প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের মাপকাঠি হিসেবে কিছু পারদর্শিতার সূচক (পিআই) নির্ধারণ করেছেন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি সূচকে শিক্ষার্থীর অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য ৩টি করে মাত্রা নির্দেশ করা হয়েছে। এসব মাত্রার মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব হয় শিক্ষার্থীর সক্ষমতা পারদর্শিতা সূচকের কোন স্তরে রয়েছে এবং কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাকে ফলাবর্তনের আওতায় আনতে হবে কিনা।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, শিক্ষার্থী-মূল্যায়নের জন্য প্রচলিত পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তে অভিনব কিছু পদ্ধতি নিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধান, দলগত আলোচনা, প্রশ্ন-উত্তর, কুইজ, বিতর্ক, ভূমিকাভিনয়, কেস স্টাডি, প্রকল্প, প্রতিবেদন ইত্যাদি। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য দুই ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন- ১. শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ২. সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিখনকালীন মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলাকালেই ধারাবাহিকভাবে শেষ হবে। আর নির্দিষ্ট শিখনযোগ্যতাগুলোর ওপরে সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষ হবে বছরে দুবার। ষাণ¥াসিক ও বাৎসরিক- এ দুটি প্রান্তিকে।

সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার প্রস্তাবনা : নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আগের মতো লিখিত পরীক্ষা রাখা হয়নি। শিক্ষার্থীদের নম্বর দানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না; কেবল পারদর্শিতার সূচকের ৩টি মাত্রাকে জ্যামিতিক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়। ফলে এ মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদসহ সব মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন কারিকুলাম খুবই আধুনিক ও যুগোপযোগী। বর্তমান পাঠ্যবইগুলোও শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশের জন্য সমৃদ্ধভাবে তৈরি করা হয়েছে। বছরে কেবল দু’বার পরীক্ষার পরিবর্তে সারা বছরব্যাপী যে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রচলন করা হয়েছে সেটিও শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতির জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে সামষ্টিক মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠাও অনেকাংশে দূর হবে। নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই এবং শিখন-শেখানো পদ্ধতি অক্ষুণ্ন রেখেই কেবল সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলে এ জটিলতার কাটানো সম্ভব।

কারিকুলামে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা : নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থী-মূল্যায়নের জন্য অভিনব কিছু পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনুসন্ধান, দলগত আলোচনা, প্রশ্ন-উত্তর, কুইজ, জরিপ, বিতর্ক, ভূমিকাভিনয়, কেস স্টাডি, সৃজনশীল লিখন, প্রদর্শন, প্রকল্প, প্রতিবেদন ইত্যাদি। উল্লিখিত প্রশ্ন-উত্তর, কুইজ, ইত্যাদি পদ্ধতি মৌখিক এবং লিখিত- উভয়ভাবেই হতে পারে। সৃজনশীল লিখন, প্রতিবেদন ইত্যাদিও স্বভাবতই লিখিতভাবে উপস্থাপনের বিষয়। সর্বোপরি, লিখিত পরীক্ষার কথা নাকচ করা হয়নি কারিকুলামে। বরং শুধু লিখিত পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরো নানা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী-মূল্যায়নকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা না করেই লিখিত পরীক্ষা পরিহার করার কারণে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
বর্তমান কারিকুলামের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- শিখনযোগ্যতা অর্জন। যোগ্যতা অর্জনের মাপকাঠি হিসেবে কতিপয় পারদর্শিতার সূচক (পিআই) নির্ধারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি সূচকে ৩টি করে মাত্রা নির্দেশ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যাচাই করা হবে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমেও এ ধরনের যাচাই পরিপূর্ণভাবে করা সম্ভব। এক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো হতে হবে পিআই ভিত্তিক এবং তা মূল্যায়নের নির্দেশনাও সরবরাহ করতে হবে পরীক্ষককে।

যেভাবে লিখিত পরীক্ষা হতে পারে : নতুন কারিকুলামে যে শিখনকালীন মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বছরে কেবল দু’বার পরীক্ষার পরিবর্তে সারা বছরব্যাপী ধারাবাহিক মূল্যায়নের এ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতির জন্য ফলপ্রসূ। এই পদ্ধতিতে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য যে ফলাবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা শ্রেণিকক্ষের সব শিক্ষার্থীর সমন্বিত অগ্রসরমানতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলেছেন, শিখনকালীন মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে বহাল রেখে সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে যে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হবে সেখানে শিখনকালীন মূল্যায়নের অর্জনকে ৪০ শতাংশে রূপান্তর করে, এর সঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়নের ৬০ শতাংশ অর্জনকে ধরে চূড়ান্ত মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রস্তুত করা যেতে পারে। সামষ্টিক মূল্যায়নে সব শিখনযোগ্যতার ওপর মূল্যায়ন হওয়া আবশ্যক। তাহলে শিক্ষার্থীরা বছরের শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি পাঠ অনুশীলন করবে এবং তাদের যাচাইও হবে যথার্থভাবে। সামষ্টিক মূল্যায়ন অবশ্যই নম্বরভিত্তিক হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রান্তিকে ৬০ নম্বরের ওপর লিখিত পরীক্ষা হওয়া সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত। পরে এ নম্বরকে পিআইয়ের মাত্রায় রূপান্তর করে নৈপুণ্য অ্যাপে ইনপুট দেয়া যাবে। নম্বরভিত্তিক পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীর খাতা দেখে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। শিক্ষকরা সব ধরনের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন। অভিভাবকরাও প্রয়োজনবোধে প্রতিটি প্রান্তিকে সন্তানের খাতা দেখে তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। আবার, এই নম্বরকে পিআইয়ের মাত্রা অনুযায়ী ইনপুট দেয়ার ফলে মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না। সব মিলিয়ে পরীক্ষা না থাকার কারণে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তারও নিরসন হবে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল বলেন, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা যুক্ত হবে কিনা তা আগামী শনিবার বৈঠকের পর বোঝা যাবে। এদিনের বৈঠকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান এবং মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞদের সামনেই নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানরা বক্তব্য দেবেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এটা ঠিক যে, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে। বোর্ড চেয়ারম্যানদের মতামত নিয়ে বাকি পথ এগুতে হবে। 

সূত্র : ভোরের কাগজ। 

সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037531852722168