নতুন ছাত্র ভর্তির সুযোগ পাবে না নিয়মভাঙ্গা মেডিক্যাল কলেজ - দৈনিকশিক্ষা

নতুন ছাত্র ভর্তির সুযোগ পাবে না নিয়মভাঙ্গা মেডিক্যাল কলেজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নিয়ম ভঙ্গকারী বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো আর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ পাবে না । নিয়ম ভঙ্গের কারণে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে সতর্ক করে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেসরকারী মেডিক্যালে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিতর্কিত বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শনিবার (৯ নভেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি খিলেছেন নিখিল মানখিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সূত্র জানায়, শর্তপূরণ করতে পারেনি এমন মেডিক্যাল কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম মানছে না অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ। বিদেশী কোটায় গোপনে উচ্চ হারে ফি নিয়ে দেশী শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পাশাপাশি নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে অনেক মেডিক্যাল কলেজ। গত বছর ভর্তি নীতিমালা ভঙ্গ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া নির্ধারিত আসনে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ১২ মেডিক্যাল কলেজকে জরিমানা গুনতে হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ৪০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল। এতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বিদেশী কোটা ছিল ২৫ শতাংশ। ওই সময়ও ৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।

হাতেগোনা কয়েকটি মেডিক্যালে ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এরপরও প্রতিবছর বেসরকারী মেডেক্যালে বিদেশী কোটা ৫-১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়। গত বছরে আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষেও ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, মোট আসনের ৫০ শতাংশ বিদেশী কোটার জন্য বরাদ্দ দেয়ায় বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোয় দেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আগের তুলনায় কয়েকগুণ আসন কমে যাচ্ছে। তাদের জন্য বরাদ্দ ৫০ শতাংশ আসন থেকে আবার বিভিন্ন কোটায় বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকেঅ কলেজে উচ্চ ভর্তি ফি আদায়ের কারণে হতে পারে না অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী।

নানা মারপ্যাঁচে পড়ে ভর্তিযুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়ে অনেক দেশী মেধাবী শিক্ষার্থী। এমনিতেই ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েও বেসরকারী কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে পারেন হাজার হাজার ভর্তিযোগ্য প্রার্থী।

দেশের অধিকাংশ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ! অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া শর্তসমূহ পরবর্তীতে আর মেনে চলে না অনেক কলেজ। অনুমোদন আছে, হাসপাতাল নেই-এমন প্রতিষ্ঠানের সমস্যাও কম নয়। নেই শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল কোর্সের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ।

চলছে ভাড়াটে ক্যাম্পাস ও শিক্ষকে। শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য পাওয়া যায় না পর্যাপ্তসংখ্যক রোগী। নেয়া হয় উচ্চ ভর্তি ফি। কলেজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে মতো সব কিছু চলে। সরকারী নিয়ন্ত্রণ নেই। ডাক্তারী ডিগ্রী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর। বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের খুব বেশি সুযোগ নেই।

দেশের চলমান কিছুসংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের এমন চিত্র তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য নতুন মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ তদন্ত করে দেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। আর বিএমডিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি অভিন্ন মূল্যায়ন কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কিছু সংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি জানান, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে।

কিছুসংখ্যক মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না।

একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষকদের। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়।

এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। নতুন কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক মাহমুদ হাসান।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব জানান, দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টি এবং মানসম্মত কলেজ গড়তে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। আর তা আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নিম্নমানের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আরেক সরকার এসে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

কলেজগুলোর ওপর শক্তিশালী ও স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দেশে দক্ষ চিকিৎসক ও মানসম্মত কলেজ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব।

এদিকে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই। অধিকাংশ কলেজ নিজেদের তৈরি নিয়মে চলছে । বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন ২০১৩ চূড়ান্তকরণ না হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, খসড়া আইন অনুযায়ী কোন ভাড়া বাড়িতে কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা যাবে না।

কলেজ একাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন আলাদা থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ধারণা গ্রহণযোগ্য হবে না। সর্বনিম্ন ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর আসনবিশিষ্ট বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য মহানগর এলাকায় কমপক্ষে কলেজের নামে দেড় একর জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে কলেজের একাডেমিক ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট এবং হাসপাতাল ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ফোরস্পেস থাকতে হবে। আর মহানগরীর বাইরে ৩ একর নির্মাণযোগ্য জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে ১ লাখ বর্গফুট ফোরস্পেস থাকতে হবে।

তবে প্রারম্ভে একাডেমিক ও হাসপাতাল মিলে সর্বনিম্ন মোট ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ফোর স্পেস থাকলে মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া যাবে। তবে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ লাখ বর্গফুট ফোরস্পেসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে হবে।

আর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল শুধুমাত্র নির্ধারিত প্লট / জমিতেই স্থাপন করতে হবে। কলেজের নামে কোন তফসিলি ব্যাংকে ১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রাখতে হবে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কমপক্ষে ২ বছর পূর্ব হতে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসমূহ ন্যূনতম ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। পরবর্তীতে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তর করা যাবে।

পরিদর্শনকালে কোন কলেজ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হলে সংশ্লিষ্ট কলেজে আসন সংখ্যা হ্রাস বা ছাত্র ছাত্রী ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা যাবে। অনিয়ম গুরুতর অথচ সংশোধনযোগ্য না হলে প্রয়োজনে কলেজের অনুমোদন স্থগিত/বাতিলা করা যাবে। কোন উদ্যোক্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসি এর লিখিত ব্যতিত মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন না।

নীতিমগত অনুমোদন প্রাপ্তির ২ বছরের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে প্রাপ্ত অনুমোদন সরাসরি বাতিল বলে গণ্য হবে। কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত লাইব্রেরি, খেলাধুলা, বিনোদন ও ছাত্রছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে ফিল্ড সাইট প্রশিক্ষণের জন্য একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি কমিউনিটি সংযুুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি কলেজে মেডিক্যাল এডুকেশন ইউনিট ও কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণ কর্মসূচী থাকতে হবে।

সরকার যেকোন সময় প্রয়োজনে এ নীতিমালা পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সংশোধন করতে পারবে বলে জানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অথচ দেশের অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে খসড়া আইনের তোয়াক্কাই করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033268928527832