নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন কেমন হলো - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন কেমন হলো

মাছুম বিল্লাহ |

শিক্ষাকে আনন্দময় ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি দূর করতে নতুন কারিকুলামের যাত্রা শুরু হয়। আর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে চালু হয় অ্যাপ। এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশসংনীয়। কিন্তু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন গত ৩০ নভেম্বর শেষ হলেও এক মাসের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের ফল দিতে পারেনি বহু স্কুল। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংরক্ষণ ও রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুতের অ্যাপ নৈপূণ্যে তথ্য অন্তুর্ভুক্তি নিয়ে বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষক জটিলতায় পড়েন। তাদেরকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ম্যানুয়ালি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ফল প্রকাশ করতে বলে মাধ্যমিক ও উচচ শিক্ষা অধিদপ্তর।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালুকৃত মূল্যায়ন পদ্ধতির তথ্য সংরক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিপোর্ট কার্ড প্রস্ততের জন্য এটুআইয়ের কারিগরি সহায়তায় ‘নৈপূণ্য’ নামের অ্যাপটি উন্নয়ন করা হয়। অ্যাপটিতে তথ্য অন্তর্ভুক্তির জটিলতা নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ ‘মূল্যায়নের তথ্য এন্ট্রিতে শিক্ষকদের ’ঘুম হারাম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর বিষয়টি আমলে নিয়ে জটিলতা এড়াতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য এন্ট্রি ও রিপোর্ট কার্ড-ট্রান্সক্রিপ্ট ডাউনলোডের সময় বেঁধে দেয় অধিদপ্তর। আশা করা হয়েছিল,  এতে দ্রুত ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। গত ২১ ডিসেম্বর মূল্যায়নের রিপোর্ট কার্ড ডাউনলোড করতে সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা ও তথ্য এন্ট্রিতে দুপুর একটা থেকে সারারাত সময় দেয়া হলেও কাজ হয়নি। ২৩ ডিসেম্বর অধিদপ্তর জানায়, সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শিক্ষকরা রিপোর্ট কার্ড, বিষয়ভিত্তিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও আবরণিক ট্রান্সক্রিপ্ট ডাউনলোড করতে পারবেন। রাত আটটার পর থেকে মূল্যায়নের তথ্য এন্ট্রি করতে পারবেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অবশেষে কাজটি ম্যানুয়ালি করার নির্দেশ আসে। গতকাল রোববার ওই সময় শেষ হয়েছে।

এই অ্যাপ জটিলতার কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৪২ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর বার্ষিক মূল্যায়নের ফল আটকে যায়। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণ ও ট্রান্সক্রিপ্ট-রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুতের অ্যাপ নৈপূণ্যে অন্তর্ভুক্তিতে জটিলতায় ষষ্ঠ শ্রেণির সাড় ২০ লাখ ও সপ্তম শ্রেণি সাড়ে ২১ লাখ শিক্ষার্থীর ফল দেয়া যায়নি। 

এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর শুরুতে বলা হয়েছিলো, শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শিখবেন, পরীক্ষাভীতি থাকবে না। পাস-ফেল থাকবে না। কোচিং ব্যবসা ও নোট-গাইড বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বছরের শেষ দিকে যখন চূড়ান্ত মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশ হলো তখন দেখা গেলো, পাস-ফেল রয়েই গেছে। মূল্যায়ন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করে ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ চিহ্ন দেবেন শিক্ষকরা। ত্রিভুজ হচেছ সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচেছ মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ মানে উন্নতি প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হলে স্কুলে তাদের উপস্থিতি ও বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা বিবেচ্য হবে। ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিত থাকলে তাকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে। তিনটি বিষয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে কোনো শিক্ষার্থীর যদি ‘চতুর্ভুজ’ হয় তাহলে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে না। আর পারদর্শিতার বিবেচনায় কোন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি কম হলে পরের ক্লাসে তাকে উঠতে দেওয়া হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষকরা।

আমরা জেনেছি, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নে শিক্ষার্থীরা একক বা দলগত কাজ করবেন, আর সেটি মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। উদ্বেগটা এখানেই। শিক্ষকরা যদি দলগত কাজের জন্য দলের সব শিক্ষার্থীকে চতুর্ভুজ দিয়ে দেন তাহলে কিছু করার থাকবে না।

কিন্তু, দলগত কাজ একজন শিক্ষার্থীর ওপর নির্ভর করে না। আগে যে অভিভাবক দুজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতেন, এখন তিনি পাঁচ-ছয়জনের কাছে প্রাইভেট পড়ান। কি পড়াচেছন সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা সন্তান তার কাছে পড়ছেন। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হবে।

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল - dainik shiksha প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074150562286377