নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন যেভাবে (পর্ব-২) - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন যেভাবে (পর্ব-২)

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন |
অপরদিকে সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো-একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা কতোটুকু অর্জিত হয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য যে মূল্যায়ন ব্যবস্থা তা-ই সামষ্টিক মূল্যায়ন। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো একটি যোগ্যতা বা যোগ্যতা সমূহ অর্জনে শিক্ষার্থী কোন পর্যায়ে আছে তা জানার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন জরুরি। এক্ষেত্রে যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মূল্যায়নের বহুমুখী পদ্ধতির সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনে শিক্ষার্থী কোন পর্যায়ে আছে তা জানা যায়। এ মূল্যায়ন শিক্ষা বছরের মধ্য সময়ে একবার এবং বছরের শেষে মোট দুইবার করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে তার রেকর্ড, তথ্য, উপাত্ত বা প্রমানকের ভিত্তিতে শিক্ষক পারদর্শিতার নির্দেশকে তার ইনপুট দিবেন। সামষ্টিক মূল্যায়ন মানে শুধুমাত্র কাগজ-কলম নির্ভর পরীক্ষা নয় বরং যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মূল্যায়নের বহুমুখী পদ্ধতির (কাজ, এসাইনমেন্ট উপস্থাপন, যোগাযোগ, কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন, ইত্যাদি)।
 
সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে ঐ নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনে শিক্ষার্থী কোন অবস্থায় আছে তা জানা। সেহেতু সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটি শ্রেণিকক্ষে দৈনন্দিন শিখন-শেখানো কার্যক্রমের অংশ নয়। সাধারণত কোনো অধ্যায়ের শেষ বা সেমিস্টার বা প্রান্তিকের শেষে এ ধরনের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থী কি শিখেছে এবং কেমন শিখেছে তা জানা। সামষ্টিক মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে-আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা, লিখিত প্রশ্নপত্র, মৌখিক ও পর্যবেক্ষণ চেকলিস্ট, এসাইনমেন্ট বা অর্পিত কর্ম সম্পাদন, ব্যবহারিক, হাতে কলমে কাজ, প্রজেক্ট সম্পাদন ইত্যাদি। আগেই বলা হয়েছে সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রত্যেক প্রান্তিক শেষে অনুষ্ঠিত হবে। এ মূল্যায়ন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে এবং এ মূল্যায়নে সব শিক্ষার্থীর জন্য একই টুলস্ ব্যবহার করা হবে। 
 
এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষার্থীর এই মূল্যায়ন শুধুমাত্র শিক্ষকই করবেন না। শিক্ষকের পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অভিভাবক, সহপাঠী এবং এলাকার লোকজন/কমিউনিটি/ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত কাজগুলোতে তাদের মূল্যায়নের এই সুযোগ রাখা হয়েছে। এই লক্ষে বিভিন্ন ধরনের ছক মতামত ও পরামর্শ প্রদানের ঘর/বক্স রাখা হয়েছে যা প্রমাণক হিসেবে কাজ করবে। মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর নিকট খুবই উপকারী। নিয়মিত মূল্যায়ন করা হলে শিক্ষার্থী বিষয়টি প্রয়োজনবোধে বার বার পড়ে। ফলে তার মধ্যে ভাল অধ্যয়ন অভ্যাস গড়ে ওঠে। ঘন ঘন মূল্যায়ন করা হলে শিক্ষার্থী তার দুর্বলতা ও অগ্রগতি জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর অগ্রগতির সার সংক্ষেপ তৈরি ও তা রিপোর্টিং এ সহায়তা করে। শিক্ষণ পদ্ধতি ও পরিকল্পিত শিখন কার্যাবলীর কার্যকারিতা নির্ণয়ে মুল্যায়ন সহায়তা করে থাকে। 
তাছাড়া, মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির সার সংক্ষেপ তৈরি ও তা জানিয়ে দেয়ার কাজে সহায়তা করে। এ ছাড়া, মূল্যায়ন থেকে শিক্ষার্থীদের সফলতা ও দুর্বলতা শনাক্ত করে তাকে ফিডব্যাক প্রদান করা যায়। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ফিডব্যাক থেকে শিক্ষার্থী তার সফলতা ও দুর্বলতা কোথায় ও তা থেকে সংশোধনের উপায় জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, শিক্ষার ইতিহাস থেকে জানা যায় ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল পরীক্ষা নির্ভর। এ পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সিলেবাস শেষ করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দিতো। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তারা পরবর্তীতে ক্লাসে প্রমোশন পেত। ঔপনিবেশিক অর্থাৎ ইংরেজ আমল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় দুইশ-আড়াইশ বছর এই পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলন আছে যা আমাদের রক্ত-মাংসে মিশে আছে।
 
বর্তমানে এই পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষার্থীদের মুল্যায়নের মাধ্যমে তাদের কৃতিত্বের বিচার পরিমাপ করতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে থাকবে না কোনো ফেল বা অকৃতকার্য ব্যবস্থা। আরো থাকবে না কোনো শ্রেণি রোল, শুধু একটি আইডি নম্বর থাকবে যা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মুল্যায়ন করা হবে। এ নতুন শিক্ষাক্রমে মূল যোগ্যতা থাকবে ১০টি। শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ীর কাজ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সকলের জন্য ১০টি বিষয় রাখার কথা বলা হয়েছে। থাকবে না কোনো বিভাগ। পরীক্ষা ও মুখস্থ নির্ভর পড়া-শোনার পরিবর্তে পারদর্শিতাকে গুরুত্ব দিয়ে ১০ শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা এবং একাদশ শ্রেণি শেষে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রম ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কৃষি, সেবা বা শিল্প খাতের একটি অকুপেশনের ওপর পেশাদারি দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে এটা চালুর করার আগে  শিক্ষকদেরকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে নেয়া হলে তা সবার জন্য আরো ভালো হতো।   আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি স্মার্ট, উন্নত, স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো তুলনা নাই। 

 

 

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা - dainik shiksha তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! - dainik shiksha কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন - dainik shiksha ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058438777923584