যারা গত ১৪ বছরেও সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেননি বা বুঝতে চাননি তাদের হাত দিয়ে বাস্তবায়ন হবে নতুন শিক্ষাক্রম? এতে পরীক্ষা নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে শিখনকালীন মূল্যায়নে। পরীক্ষা যতটুকু হবে তাতেও থাকছে না সৃজনশীল। এ অবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর আগে আগামী ডিসেম্বরে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষকরা। কিন্তু এতে শিক্ষকরা কতখানি প্রস্তুত হতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া শিক্ষকদের হাতেই থাকবে অধিকাংশ মূল্যায়ন। এখানে শিক্ষকরা কতটা স্থানীয় চাপ সইতে পারবেন তা নিয়েও খোদ শিক্ষরাই ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার জাতীয় কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। যদিও এর আগে থেকেই গত ফেব্রুয়ারিতে ৬২ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এর পাইলটিং শুরু হয়েছে। আগামী আগস্টে ৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন কারিকুলামে শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। যার দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। কিন্তু আমাদের সব শিক্ষক দক্ষ নয়। এমনকি অনেক শিক্ষকেরই এখন পর্যন্ত ব্যাচেলর ইন এডুকেশন (বিএড), মাস্টার ইন এডুকেশনের (এমএড) মতো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। ফলে শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দিতে হলে সবার আগে প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়ে নতুন কিছু শুরু করলে তা যত ভালোই হোক বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়। ব্যর্থতার জ্বলন্ত উদাহরণ সৃজনশীল পদ্ধতি। তাছাড়া নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের হাতে অধিকাংশ মূল্যায়ন যেটা শিক্ষকদের স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ার কারণ হতে পারে। শিক্ষকদের রক্ষার জন্যও উপায় খুঁজতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সংস্থার সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির কাজ শেষ করব। তারপর অক্টোবর ও নভেম্বরে ৬৪ জেলায় মাস্টার ট্রেইনার এবং সকল উপজেলা পর্যায়ে ট্রেইনার তৈরি করব। তারা আগামী নভেম্বরে সব শিক্ষককে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেবেন। এরপরও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ চলতেই থাকবে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে মূলত ধারাবাহিক মূল্যায়নেই জোর দেওয়া হচ্ছে। এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে পাঠ চলাকালে। এজন্য শিক্ষার্থীকে কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। যদি কোনো শিক্ষার্থী না বোঝে, তাহলে তার দুর্বলতা খুঁজে বের করে সমাধান করা হবে। আর আরেকটি অংশ থাকবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। সেখানে খুব কম নম্বরের পরীক্ষা থাকবে। সেই সামষ্টিক মূল্যায়নটা কীভাবে হবে তা নিয়ে কাজ করছি আমরা। অন্যান্য দেশে কীভাবে পরীক্ষা হয়, সেটাও আমরা খুঁজে দেখছি। মূলত মুখস্তের বাইরে গিয়ে সহজ কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’