সাম্প্রতিক বন্যার পানির তোড়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হওয়ায় ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা বিপাকে পড়েছেন। কোথাও খোলা আকাশের নিচে, আবার কোথাও টিনের ছাপড়া তুলে পাঠদান চলছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি অবহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এবারের দু’দফা বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন ১২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ফুলছড়িতে ৫, সুন্দরগঞ্জে ২ ও সদর উপজেলায় ৫টি রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ফুলছড়ির হারুডাঙ্গা, ধলিপাটাধোয়া, কেতকিরহাট, জামিরা ও আঙ্গারীদহ, সদর উপজেলার চিথুলিয়ার চর, চিথুলিয়া দিগর নতুনপাড়া, বাজে চিথুলিয়া, মৌলভীরচর ও কেবলাগঞ্জ এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উজানবুড়াইল ও পূর্ব লাল চামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন কেতকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দ্বিতল ভবন ছিল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সে ভবনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। পানির তোড়ে ভবনটি কোথায় ভেসে গেছে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হারিয়ে যাওয়া বিদ্যালয় ভবনের পাশে গাছতলা ও টিনের ছাপড়ার নিচে বসে শিক্ষার্থীরা এখন লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ার পরিবেশ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মাহিয়া মাহবুবা জানায়, পড়াশোনা করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। মাটিতে বসে এখন পড়াশোনা করতে হয়। টিনের ছাপড়ার পাশ দিয়ে রাস্তা চলে যাওয়ায় লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাছাড়া ওই রাস্তায় সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচল করলে ধুলাবালি উড়ে এসে তাদের চোখে-মুখে এসে পড়ে। এখানে লেখাপড়া করতে ইচ্ছে করে না বলে সে জানায়। সে দ্রুত স্কুল ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলে।
ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা আবদুর রাজ্জাক বলেন, দ্রুত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা দরকার। তা না হলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করতে পারবে না। ফলে তারা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়বে। তিনি শিক্ষা বিভাগের কাছে দ্রুত স্কুল ভবন নির্মাণের দাবি জানান।
কেতকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজিয়া খাতুন বলেন, ভেঙে যাওয়া স্কুলের পাশে তারা স্থানীয় উদ্যোগে ছাপড়া ঘর তুলে পাঠদান শুরু করেছেন। ছাপড়া ঘরের টিন দিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক। কিন্তু কবে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলছেন না। এভাবে ক্লাস নিতে হলে চরাঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে পারে।
অন্যান্য বিদ্যালয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেগুলোর কোনোটিতে ছাপড়া ঘর তুলে লেখাপড়া চলছে, আবার কোনোটিতে ঘর তুলতে না পারায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস চলছে। ফলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশবিহীন অবস্থায় লেখাপড়া চালাচ্ছেন। ফলে এসব শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন তারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসেন আলী বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় ১২টি স্কুল ভবন নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।