নন-এমপিও অনার্স শিক্ষক, কাজ আছে বেতন নেই - দৈনিকশিক্ষা

নন-এমপিও অনার্স শিক্ষক, কাজ আছে বেতন নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেঁচে থাকার জন্য সবার কাজ প্রয়োজন। কারণ কাজ না পেলে টাকা পাওয়া যাবে না। যদি এমন হয় কাজ করতে হয় কিন্তু টাকা পাওয়া যায় না। তবে কেমন হয়। ব্যাপারটি হাস্যকর হলেও অবিশ্বাস্য নয়। বিষয়টি নিয়ে কম-বেশি আলোচনা হয়েছে। তবুও মনে হয় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনও তা জানেন না। খোদ রাষ্ট্র্র পরিচালনাকারী নীতিনির্ধারকদের অনেকেই বিষয়টি জানেন বলে মনে হয় না। আর এ বিষয়টি হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭৮৮টি অনার্স কলেজের প্রায় চার হাজার পাঠদানকারী শিক্ষক। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ নিয়মিত কলেজে উপস্থিত থেকে পাঠদান করলেও বছরের পর বছর সরকারের তহবিল হতে একটি টাকাও পাচ্ছেন না। এতে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হওয়ার পাশাপাশি অনার্সের শিক্ষকরা আর্থিকভাবেও বঞ্চিত হচ্ছেন। নিজ নিজ কলেজ হতে নিয়োগকৃত অনার্সের শিক্ষকদের শতভাগ বেতন ভাতা দেয়ার কথা থাকলেও (জাতীয় বিশ-বিদ্যালয়ের বিধি মতে) অধিকাংশ কলেজ শিক্ষকদের কিছুই দিচ্ছে না। এমনকি যোগদানপত্র ছাড়াই (যা প্রতিষ্ঠান হতে প্রদান করা হয়নি) শিক্ষকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন (বড় শহরে-নগরে)। আবার মুষ্টিমেয় কলেজের শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাসিক তিন/পাঁচ হাজার টাকা। অথচ একজন কৃষিশ্রমিককে এখন তিন বেলা খাবারসহ দৈনিক দেয়া হয় চার-পাঁচশত টাকা।

অনার্স শিক্ষকদের বঞ্চনার বিষয়টি শুধু অমানবিক নয় অনৈতিকও। শতভাগ বেতন-ভাতা দেয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন কলেজগুলো তা দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোন তদারকি। চাকরি হারানোর ভয়ে শিক্ষকরা বেতন না পেয়েও বলছেন পাচ্ছি। আদতে শিক্ষকরা চাকরি রক্ষার্থে ও সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছেন। তবুও এভাবে কত দিন? তাই তো অনার্সের শিক্ষকরা গঠন করেছেন একাধিক নন-এমপিও অনার্স শিক্ষক সমিতি। ইতোমধ্যে সংগঠনের ব্যানারে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। করেছেন সাংবাদিক সম্মেলন। ফেসবুকেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবুও মনে হচ্ছে এতে কারোরই কিচ্ছু যায় আসে না। উল্লেখ্য, আমার প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ কলেজ-বিশ-বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) প্রথম ননএমপিও অনার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি তুলে।

বলতে দ্বিধা নেই উচ্চশিক্ষা বিস্তারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কিন্তু শিক্ষা বিস্তরণ কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি শিক্ষকদের অভুক্ত ও হতাশায় রেখে কীভাবে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব সেটি বোধোগম্য নয়। গত ১০ বছরে শিক্ষাসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন হয়েছে। তবে শিক্ষক সংগঠন ও শিক্ষাবিদের প্রস্তাব অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে না। কাজেই শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করে জাতীয় বিশ-বিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষায় মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য অনার্স কোর্সে পাঠদানরত নন-এমপিও শিক্ষকদের দ্রুত এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেয়ার কোন বিকল্প নেই। এতে সফল হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ। অন্যথায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান নিয়ে চলমান নিম্নধারনা চলতেই থাকবে।

কারণ বিভাগভিত্তিক মাত্র দুজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক দ্বারা উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি পাস এবং অনার্সের চারটি বর্ষের সুষ্ঠু পাঠদান কোনক্রমেই সম্ভব নয়। ফলে কোর্স শেষ না করেই শিক্ষার্থীরা ইয়ারভিত্তিক ফাইনাল পরীক্ষায় বসবে। বাজারের গাইড বই মুখস্থ করে কিছু লিখে দিয়ে আসবে। পরীক্ষকরা মানবিক কারণে ওদের পাস নম্বর দিয়ে দেবেন। ইনকোর্স-ফাইনাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই দ্বিতীয় শ্রেণীর সনদ পেয়ে যাবে। বেশিরভাগ যাবেও তাই। উচ্চশিক্ষার মানে কখনোই তা হতে পারে না। একমাত্র দক্ষ ও পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষকের দ্বারাই সম্ভব মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা। কাজেই নন-এমপিও অনার্স শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার। 

এমপিওভুক্তির আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কলেজকে বাধ্য করতে হবে যাতে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা বকেয়াসহ শত ভাগ বেতন-ভাতা পান। আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয় বিষয়টি সুরাহা করবেন।

লেখক : শ্যামল কুমার সরকার, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, ঝিট্কা খাজা রহমত আলী কলেজ, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087919235229492