নর্থসাউথ গ্রন্থাগারে জঙ্গিবাদী বই : ইউজিসি প্রতিবেদন - Dainikshiksha

নর্থসাউথ গ্রন্থাগারে জঙ্গিবাদী বই : ইউজিসি প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে জঙ্গিবাদী বইসহ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নানা কারণে সমালোচিত ও আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগারে জঙ্গিবই, জমি কেনায় অনিয়ম, ভর্তি বাণিজ্য, সাধারণ তহবিল থেকে ট্রাস্টিদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও বিদেশ ভ্রমণ, ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েক সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও আদালতে এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা বিষয়ে সম্প্রতি তদন্ত করে ইউজিসি।

তদন্তকালে ইউজিসি দল এনএসইউর গ্রন্থাগার পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি তৎপরতামূলক হিযবুত তাহ্রীরের বই গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়। এ বই গত বছরের ১৩ আগস্ট সর্বশেষ ইস্যু করা হয়।

তদন্ত কমিটি বলেছে, গ্রন্থাগারে এ ধরনের বই রাখা বেসরকারি আইনের ৬ (১০) ধারার লঙ্ঘন। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের পরিপন্থী বিবেচিত হওয়া এনএসইউর গ্রন্থাগারের সংরক্ষিত নিষিদ্ধ সব বই পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় নর্থসাউথ ভার্র্সিটি কর্তৃপক্ষকে জঙ্গিবাদী ও স্বাধীনতা বিরোধী বইগুলো পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে। প্রতিবেদনের কপি দৈনিকশিক্ষাডটকম’র হাতে রয়েছে।

কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে, ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে একাধিক সেকশন চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এনএসইউতে। প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাপের মুখে বের করে দেওয়া হয়েছে উপাচার্য আমিন উদ্দিন সরকারকে। তিনি বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর থেকে নিযুক্ত এই উপাচার্য চার বছরের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

ইউজিসির দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা। অপর সদস্য ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপপরিচালক জেসমিন পারভীন। গত ১১ অক্টোবর এ তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তদন্তকালে ইউজিসির তদন্ত দল এনএসইউর লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের বই পেয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এমএ কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নন। ভালোভাবে জেনে তিনি কথা বলবেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল আহমেদের সঙ্গে যোগযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত নন। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য তাতে সাড়া দেননি।

জমি কেনায় অনিয়ম :তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে। অথচ এই জমি কেনার ব্যপারে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। এ নিয়ে বিওটির সদস্য ড. রওশন আলম আপত্তি তুললে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত দলের প্রশ্নের জবাবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে ২৫০ কোটি টাকা দিয়ে ওই জমি বায়না করা হয়। অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে পরিষদ করা হবে। এ প্রসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে_ এটা অনিয়ম। প্রকৃতপক্ষে, বেসরকারি আইন-২০১০ এর ধারা ৯ (৩) অনুযায়ী, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট কোনোভাবে দায়বদ্ধ বা হস্তান্তর করা যাইবে না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, জমি কেনা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছরের আগস্টে ট্রাস্টিবোর্ডের দু’জন সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তারা জানান, বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যকে না জানিয়ে সভায় ৫০০ কোটি টাকায় জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই ভাবে জমির বায়না বাবদ পরিশোধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তারা বলেন, সভায় অনুপস্থিত বোর্ড সদস্যদের উপস্থিত দেখানো হয়েছে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে। ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়, ১০ সদস্যের ট্রাস্টিবোর্ডের সভাপতি ছিলেন বেনজীর আহমেদ। তার সভাপতিত্বে গত বছরের ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত বোর্ডের ৩৬তম সভায় ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন ও হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ডের অন্যান্য সদস্য হলেন_ আজিম উদ্দীন, রওশন আলম, রাগীব আলী, এমএ হাশেম, এমএ কাশেম, ইয়াসমিন কামাল, মো. শাহজাহান, মাহবুব হোসাইন ও আমিন ইউ সরকার। এদের অধিকাংশ জমি কেনা সংক্রান্ত কোনো কিছুই জানতেন না। তাদের কারও কারও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

লক্ষাধিক টাকা প্রতি সভায় সম্মানি গ্রহণ :প্রতিবেদনে বলা হয়, বিওটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানি বাবদ লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করেন বলে তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার জানান, বিওটির সদস্যরা প্রতি মাসে নূ্যনতম একবার সভায় মিলিত হন এবং সভায় অংশগ্রহণের জন্য সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ প্রতি সভায় ৫০ হাজার টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার তদন্ত দলকে জানান, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি সদস্যদের সময়ের মূল্য অনেক বেশি। তারা যানজট মোকাবেলা করে সভায় সময় দেওয়ার জন্য তাদেরকে প্রদেয় সম্মানি (অর্থ) খুবই নগণ্য।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিওটির সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি সফর করেন, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থী।

ইউজিসির একটি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক সরকারবিরোধী তথ্য তদন্ত কমিটির হাতে থাকলেও তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038740634918213