নলছিটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া : বদলি বাণিজ্যে শিক্ষক নেতা - দৈনিকশিক্ষা

নলছিটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া : বদলি বাণিজ্যে শিক্ষক নেতা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি |

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষকদের বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। শুধু বদলি নয়, বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনাসহ নানা কাজে টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহতাব হোসেন টিটু শিক্ষা কর্মকর্তার এসব কাজে সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তা ও শিক্ষক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরেও লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানা যায়।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানকালে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বদলি বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন,  নানা অজুহাতে তাদের দূরের বিদ্যালয়ে বদলি করা হচ্ছে। আর টাকার বিনিময়ে তুলনামূলক কমবয়সী শিক্ষকদের ওইসব বিদ্যালয়ে বদলি করে আনা হচ্ছে। অন্যদিকে টাকা দিলে আবার সেই বদলি স্থগিত করা হয়। শুধু তাই নয়, নানা অজুহাতে  এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে উৎকোচ।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার কাজেও মোটা অংকের অর্থ বিনিময় হয়। যেখানে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে তার ঠিক করে দেয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি মেশিন কিনেতে বাধ্য হচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর শিক্ষা কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করছেন জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন টিটু। তার ভয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা মুখ খুলতে সাহস পান না।  তারা অসহায় বোধ করছেন।

শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন, নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে তদবির ও বদলি বাণিজ্যে সব সময় ব্যস্ত থাকেন শিক্ষক নেতা মাহতাব হোসেন টিটু। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন এই শিক্ষক নেতা উপজেলার শিক্ষকদের জিম্মি করে সুবিধাজনক স্থানে বদলির প্রস্তাব দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এ বাণিজ্য ধরে রাখতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। শিক্ষক নেতা টিটু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তার ভয়ে এবিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি নিজের খেয়াল-খুশি মত স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। নিজ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে তাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে তদবিরে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এমনকি তিনি গতবছর ছুটি না নিয়েই মালয়েশিয়া ভ্রমণ করে আসেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জেলা উপজেলায় নামে বেনামে তার ঠিকাদারি ব্যবসা চলছে।

আরা আরো অভিযোগ করেন, সদ্য-সমাপ্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা পরীক্ষায় ভালো নম্বর ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামেও প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ১৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনোনীত এক প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন কিনতে শিক্ষকদের বাধ্য করা হচ্ছে। যেটি বাজার মূল্যের চেয়ে চার গুন বেশি দাম নেয়া হচ্ছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক শিক্ষিক অভিযোগ করে জানান, চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক নেতা টিটু নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শিক্ষক বদলির সময়। এ কারণে এই শিক্ষক নেতা শিক্ষা অফিসের সাথে যোগাযোগ করে প্রতি বছর শিক্ষকদের বদলির কাজ হাতে নেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পছন্দের স্কুলে পদায়ন করিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে টাকার ভাগবাটোয়ারা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক নেতা মাহতাব হোসেন টিটু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। শিক্ষকদের বদলিতে বাণিজ্য বিষয়টি আমার জানার বিষয় না। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। এসব অভিযোগের কারণে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমকর্তা মোজাম্মেল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকদের বদলি নিয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে তা সত্য নয়। শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে শিক্ষকদের বদলি করা হয়। শিক্ষকদের বদলিতে বাণিজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। আর বায়োমেট্রিক মেশিনে ক্রয়ে যেসব অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বলছেন সেগুলোও সঠিক নয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে হাজিরা মেশিন কেনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা মেশিন ক্রয় করছেন, আমরা শুধু তা মনিটর করছি।

এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়,  উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজে শিক্ষা অফিসে গিয়ে অফিস সহকারী নাসিমা পারভীন ও মো. মাসুদ হোসেনের কাছে ধরনা দিতে হয়। বিভিন্ন কাজের জন্য তারা ঘুষ নেন।  উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক দুদকে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগটি তদন্তের জন্য নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)দায়িত্ব দেয়া হয়। 

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061688423156738