নাঈমের বাবার সাত কিলোমিটার আক্ষেপ - দৈনিকশিক্ষা

নাঈমের বাবার সাত কিলোমিটার আক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার নীলক্ষেত থেকে কামরাঙ্গীরচরে আসা-যাওয়া মিলিয়ে দূরত্ব সাড়ে ৭ কিলোমিটারের মতো। ছেলে নাঈম হাসানের পকেট খরচ জোগাতে প্রায় প্রতিদিন এই পথ হাঁটতেন তার বাবা। এতে তার বাঁচত ১৬০ টাকা। এই টাকা তুলে দিতেন নাঈমের হাতে; তার কলেজে যাওয়ার খরচ হিসেবে। টানাপোড়েনের সংসারে অমিত প্রতিভা আর মেধাবী সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার এমন কঠিন সংগ্রামের কথা জানালেন নাঈমের বাবা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, 'আমার আর হাঁটতে হবে না। নাঈম নেই। আর কার জন্য হাঁটব!'   

বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈমকে। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাউলাহাটি চৌরাস্তা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়েও নটর ডেম কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। গতকাল সকালে নাঈমের মরদেহ তার দাদাবাড়ি লক্ষ্মীপুরের কাজীরখিলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মা-বাবা, ভাইসহ নাঈমের স্বজনরা এখন গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।

ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা রিসিভ করেন নাঈমের মামা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা এখন নাঈমের কবরের সামনে রয়েছি। ও শুধু আমার ভাগ্নে নয়, সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। ঢাকায় বাসায় গেলে পুরো রাত নানা গল্প শুনিয়ে কাটিয়ে দিত। এত মেধাবী আর বিচক্ষণ ছেলে দেখিনি! অন্যায় দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করত। এ কারণে স্বপ্ন দেখত বিচারক হওয়ার।

এর পরই নাঈমের বাবার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ছেলে বিরিয়ানি খেতে খুব ভালোবাসত। বুধবার ওর মা বিরিয়ানি রেঁধে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল- ছেলে কলেজ থেকে এসে খাবে। এখন সেই বিরিয়ানি কে খাবে! খুব শরবতও পছন্দ করত ছেলে। এসব কথা মনে পড়লে কীভাবে নিজেকে সামলাব?

ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কী কথা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বুধবার ছেলে কলেজে যাওয়ার সময় নতুন মাস্ক চাইল। আমাকে নতুন মাস্ক খুঁজে দিতে বলল। এটাই শেষ কথা। নটর ডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমি ছেলেকে আনা-নেওয়া করতাম। মর্নিং শিফটের ক্লাস ছিল ওর। ছুটি হওয়া পর্যন্ত কলেজের সামনে বসে থাকতাম। মাসখানেক আগে নাঈম বলল, ও পথ চিনে গেছে। এখন একাকী যেতে সমস্যা হবে না। আর কলেজে আনা-নেওয়া করলে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে বসতে বাবার দেরি হয়। এ কারণে নিজে নিজে যাওয়া-আসা করছিল। কেন ওকে একা ছাড়লাম!'

নাঈমের মামা ফারুক আহমেদ বলেন, ওরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছিল। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নীলক্ষেতে নাঈমের বাবা 'সৈনিক বুক সেন্টার' নামে একটি বইয়ের দোকান খোলেন। মাঝেমধ্যে নাঈমের মা ফোন করে অভাবের কথা জানাতেন। টুকটাক যা পারতাম, সহযোগিতা করতাম। ওদের তেমন অর্থ-সম্পদ নেই। নাঈমকে ঘিরে ওর মা-বাবা সংসারের দুঃখ ঘোচানোর স্বপ্ন দেখত। ও বেঁচে থাকলে পরিবারের নয় শুধু; দেশের সম্পদ হতো- ভাগিনা বলে বলছি না।

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, পুত্রশোকে পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। নাঈমের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়- হত্যাকাণ্ড। আমরা এটা চাই- ঢাকায় নাঈমের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ওর নামে এমন কিছু করা হোক, যাতে তার সহপাঠী এবং স্বজনরা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পায়। করোনাকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তার একশ ভাগের একভাগও যদি সড়কের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হতো, তাহলে এই প্রাণহানি দেখতে হতো না।

নাঈমের একমাত্র ভাই মুনতাসীর মামুন বলেন, এ শোক কীভাবে ভুলব? আজীবন এই ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে।

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041790008544922