নাস্তানাবুদ বদলিবিহীন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

নাস্তানাবুদ বদলিবিহীন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

মুহাম্মদ আলী |

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েই চলেছে। বছরে বছরে কিংবা মাসে মাসে নয়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিদিন বললেও ভুল হবে। দাম বাড়ছে সকাল বিকাল। জনজীবন আজ বিপর্যস্ত, মধ্যবিত্তরা ধরাশায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকের  চোখে সরিষা ফুল ।

চালের দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে। বেড়েছে লবণ, তেল, আটা, মরিচ, পেঁয়াজ,  রসুন, আদা, চিনি, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম। দাম বেড়েছে মাছ, মাংস, তরি তরকারির। দাম বেড়েছে সব কিছুর। হয়ত কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। যাদের আয় বেড়েছে তারা হয়ত বাজারের সাথে তাল মেলাতে পারছেন। তবে সে সংখ্যা খুবই নগণ্য। দেশের অধিকাংশ মানুষই নিম্ন ও মধ্য আয়ের। তারা তো কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের সাথে পেরে উঠতে পারছেন না। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষেরা সরকারি, বেসরকারি নানা সাহায্য পেয়ে থাকেন। তারা অন্যের কাছে চাইতেও পারেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। আর এদের মধ্যে আছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তারা কোনো সাহায্যও পান না। আবার কারো কাছে হাতও পাততে পারেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে যে শিক্ষক বাড়ি ছেড়ে ১০০ কিলোমিটার থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চাকরি করছেন, তারা তো একেবারেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হয়তো বলতে পারেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি তো বদলিযোগ্য নয়, সেটা জেনেই চাকরিতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু যারা এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত তারা তো দূরের জেলায় চাকরি পেয়ে যোগদান করেছেন। 

 একজন রাজমিস্ত্রি কিংবা অন্যান্য শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা নূন্যতম ৫০০ টাকা। অথচ এন্ট্রি লেভেলে একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষকের সর্বসাকুল্যে বেতন মাত্র ১২,৭৫০ টাকা, যা দৈনিক হিসেবে মাত্র ৪২৫ টাকা। একজন শ্রমিক যেন তেন কাপড় পরিধান করে কর্মে যেতে পারেন। কিন্তু একজন শিক্ষককে অবশ্যই মার্জিত পোশাক পরেই পাঠদান করতে হয়। পোশাকের জন্য শ্রমিককে বাড়তি খরচা গুনতে না হলেও শিক্ষকের তা প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রতিষ্ঠান থেকে একটি টাকাও সম্মানী পান না। কিছু শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনিতে সামান্য বাড়তি আয় করতে পারলেও বেশিরভাগ শিক্ষক তা পারেন না।

কিন্তু খরচ তো হবেই। আমার খুব আফসোস হয় মানুষ গড়ার কারিগরদের দুরবস্থার কথা ভেবে। যাদের থাকার কথা সর্বাপেক্ষা সমাদৃত, থাকার কথা সর্বোচ্চ সম্মানীয় আসনে, অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, নিপীড়িত। যে শিক্ষক দূরে গিয়ে চাকরি করছেন, তাকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। একটা ঝুপরি ঘর ভাড়া নিলেও তিনহাজার টাকা গুনতে হয়। ২/৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের এক মাসের সর্বনিম্ন খরচ তার প্রাপ্ত বেতনের চেয়ে বেশি। আবার আমার মত বেশি দূরে যারা চাকরি করছেন, তাদের একার একবার বাড়ি যাতায়াত খরচ গুনতে হয় সর্বনিম্ন ৪,০০০ টাকা। যারা নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করছেন তারা তবু দুবেলা ডালভাত খেয়ে বাঁচতে পারছেন। গ্রাম এলাকার নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করা একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের একবেলার বাজার না থাকলেও কচুশাক ভর্তা খেয়ে পার করতে পারেন। কিন্তু দূরে গিয়ে চাকরিরত একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সে সুযোগও নেই। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এই বাজারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিকল্প নেই। আর অর্থনৈতিক মুক্তি বলতে বেতনবৃদ্ধির কথাই বলতে হয়। আর বেতন বৃদ্ধির কথা ভাবলেই সরকারের সক্ষমতার বিষয়টিও সামনে আসে। সহসা বেতন বৃদ্ধি সরকারের সম্ভব হয় না। তবে কি শিক্ষকরা অবহেলায়, অপমানে আর অনাহারে মরবেন? হ্যাঁ, আমার কাছে এমনটাই মনে হয়। যদি এর একটা সুরাহা টানা না হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এই বাজারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দিকে সরকার বাহাদুরের মুখ তুলে তাকানোটা এখন খুবই প্রয়োজন। সক্ষমতার প্রশ্নে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো সম্ভব যদি না হয় তবে তাদের বাজেটবিহীন ঐচ্ছিক বদলির সুযোগ প্রদান করা দরকার। এতে সরকারের এক টাকাও ব্যয় হবে না। অথচ দূরবর্তী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দুবেলা ডালভাত খেয়ে বাঁচতে পারবেন। সুতরাং সরকার বাহাদুরের নিকট বিনয়ের সাথে নিবেদন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঐচ্ছিক বদলির সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করুন। 

লেখক : বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক  

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065000057220459