এমপিওর খসড়া নীতিমালায় নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (৬ষ্ঠ-৮ম) বিদ্যমান পদের তুলনায় আরো ১০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষকের পদ আগের মতো একটিই রাখা হয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) পদ সংখ্যা ১ থেকে ২টি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষার হাতে এসেছে খসড়া নীতিমালা। এতে সহকারী শিক্ষক( কৃষি)পদ সংখ্যা ১ তবে এ ক্ষেত্রে ১টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক( গার্হ্যস্থ)পদ সংখ্যা ১, সহকারী শিক্ষক( গনিত)পদ সংখ্যা ১টি। তবে এ ক্ষেত্রে ১টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক( ভৌত বিজ্ঞান)পদ সংখ্যা ১, সহকারী শিক্ষক( ধর্ম)পদ সংখ্যা ১,টি।
সহকারী শিক্ষক( শারীরিক শিক্ষা)পদ সংখ্যা ১, সহকারী শিক্ষক( তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)পদ সংখ্যা ১ তবে এ ক্ষেত্রে ১টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক( চারূও কারূকলা)পদ সংখ্যা ১ তবে এ ক্ষেত্রে ১টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদ সংখ্যা ১ তবে এ ক্ষেত্রে ১টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ সংখ্যা ১টি। গবেষণাগার/ ল্যাব সহকারি পদ সংখ্যা ১। অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী/মালী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদ সংখ্যা ১ টি। তবে এ ক্ষেত্রে ৩টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। নৈশ প্রহরী পদ সংখ্যা ১টি । আয়া (বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য)পদ সংখ্যা ১টি।
নিম্ন মাধ্যমিককে শ্রেণি শাখা,বিষয় এবং বিভাগ খোলার জন্য প্রস্তাবিত শতাবলির মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৫০ জন। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এর অধিক হলে পরবর্তী ৪০ জনের জন্য ২য় শাখা খোলা যাবে। তৃতীয় এবং পরবর্তী শাখা খোলার জন্য পূর্ববর্তী শাখার ৫০ জন পূর্ণ হতে হবে। প্রতি শাখার জন্য একজন হিসাবে গণনাপূর্বক শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তবে অনুমোদিত শ্রেণি শাখায় ইংরেজি,বাংলা,গণিত,সামাজিক বিজ্ঞান,ভৌত বিজ্ঞান,ভৌত বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,ধর্ম,কৃষি এবং গার্হস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ক্রম অনুসরণ করে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে ১০০ নম্বরের মধ্যে দেয়া গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতে। একাডেমিক স্বীকৃতির বয়স, শিক্ষার্থী সংখ্যা, পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং উত্তীর্ণের সংখ্যা- এ চারটি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে দেয়া হবে। নীতিমালায় অসত্য তথ্য দিয়ে বা জালিয়াতি করে এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান প্রতিষ্ঠান ও পরিচালনা কমিটি দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ আছে। এ ক্ষেত্রে ‘যথোপযুক্ত আইনানুগ’ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ থাকলেও সেটা কী তা বলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা, স্বীকৃতি/অধিভুক্তি, জনবলকাঠামোর আরোপিত শর্ত, কাম্য শিক্ষার্থী-ফলাফল, পরিচালনা কমিটি না থাকলে এমপিও দেয়া হবে না। এনটিআরসিএ’র মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এমপিও পাবেন না।
নীতিমালা অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকের বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সামঞ্জস্য রক্ষা করা হবে। প্রত্যেক শিক্ষকের নিজ মূল বিষয়ের বাইরে আরও ২টি বিষয়ে পাঠদানের দক্ষতা থাকতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিফট চালু আছে, সেগুলোয় প্রতি শিফটের একেক শ্রেণীতে কমপক্ষে ১৫০ জন করে ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে। ১৫০ জন বা এর অধিক শিক্ষার্থী থাকলেই শুধু শিফট চালু থাকবে। এ নীতিমালা জারির পর কোনো প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শিফট খোলা যাবে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাও ক্যাম্পাস বা ব্রাঞ্চ খুলতে পারবে না।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল অর্থাৎ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে জনবল কাঠামোর শর্তের বাইরে এমপিওভুক্ত অতিরিক্ত শিক্ষক আছেন তারা ‘উদ্বৃত্ত’ হিসেবে কর্মরত থাকবেন। কিন্তু ওই শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর সেই পদে আর কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানের কোনো প্যাটার্নভুক্ত পদও যদি শূন্য হয়, তাহলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে উদ্বৃত্ত পদের শিক্ষককে সেই (শূন্যপদে) সমন্বয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত ‘উদ্বৃত্ত’ শিক্ষক আগে সমন্বয় হবে। এ ধরনের শিক্ষকের সমন্বয় হয়ে যাওয়ার পর যদি পদ শূন্য থাকে বা হয়, তাহলে ‘নন-এমপিও উদ্বৃত্ত’ শিক্ষক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় হবে। কিন্তু ‘উদ্বৃত্ত’ শিক্ষক-কর্মচারী থাকতে কিছুতেই নতুন নিয়োগ দেয়া যাবে না। তবে একই বিষয় বা পদভুক্ত ‘উদ্বৃত্ত’ না থাকলে নতুন নিয়োগ করা যাবে।
নীতিমালার নির্ধারিত যোগ্যতা ছাড়া এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত প্রধান বা সহকারী প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দেশনা কী হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই ধরনের শিক্ষকরা এক ধাপ নিচে বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত যোগ্যতাবিহীন অসংখ্য প্রধান বা সহকারী প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন। নীতিমালায় ওইসব শিক্ষকের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে নির্ধারিত যোগ্যতা ছাড়া এসব পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে হলে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সমমান ও বিএড ডিগ্রি সমমানের হতে হবে। প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড-৮ (২৩ হাজার-৫৫ হাজার ৪৭০)।
কোনো প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করলে বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধার শতভাগ (প্রতিষ্ঠানকে) পরিশোধ করতে হবে। ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারী অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা গণনাযোগ্য হবে। তবে যোগদানের আগের বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য। এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী একাধিক পদে চাকরি বা আর্থিক লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনে শুধু একটি তৃতীয় বিভাগ/সমমান গ্রহণযোগ্য হবে। এ নীতিমালা জারির পর কেউ যদি বকেয়াপ্রাপ্য হন, সে ক্ষেত্রে তা পরিশোধ করা হবে না।শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মহিলা কোটা পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।
আগামীকাল তৃতীয় পর্ব