নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন - দৈনিকশিক্ষা

নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

বরিশাল প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনের ৭ দিনের মাথায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী রাব্বী খান। ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপ রাব্বী খানকে ধরে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অকথ্য নির্যাতন চালায়।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ঘটনাস্থলে গিয়ে রাব্বী খানকে উদ্ধার করেন। তিনি বর্তমানে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। রোববার দুপুরে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

৭ আগস্ট শিক্ষার্থী রাব্বী খান ববি’র প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। রাব্বী খান বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী অমিত হাসান রক্তিম গ্রুপের সক্রিয় কর্মী।

প্রতিপক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাতের নেতৃত্বে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে রাব্বী খান মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষার্থীদের একাধিক সূত্র জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র অনুসারী। অমিত হাসান রক্তিমের নেতৃত্বে ববি ক্যাম্পাসে সক্রিয় অপরপক্ষটি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী। 

রোববার বিকেলে রাব্বী খান মোবাইল ফোনে অভিযোগ করে জানান, রোববার দুপুর ১২টায় তার ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা ছিল। প্রক্টরের আশ্বাসে তিনি ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে যান। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দুপুর ১টার দিকে তিনি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বাসায় ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ৫-৬ জন শিক্ষার্থী এসে তাকে ধরে ফেলে। পরে তাকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানফটকের বিপরীতে নাজেমস নামের একটি হোটেলের সামনে। সেখানে মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত ৩০-৩৫ জন সহযোগী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি আরও জানান, সেখানে নেওয়ার পর মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত তার এক সহযোগীকে হলে থাকা তার কক্ষ থেকে রামদা নিয়ে আসতে বলেন। রামদা নিয়ে আসার পর সিফাত নিজেই রাম দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে তার দুই পায়ের হাঁটু ও তার ওপরে আঘাত করে। সিফাতের সহযোগীরা মাথায় ও সমস্ত শরীরে কিলঘুষি মেরে গুরুতর আহত করে। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। খবর পেয়ে ববির প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম ২টা ৫১ মিনিটে রাব্বী খানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত মোবাইল ফোনে বলেন, ববি ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এ রকম ঘটনা সম্পর্কে তিনি কোনো কিছু জানেন না। যদি কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকে তাহলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে।

জানতে চাইলে ববি’র প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং রাব্বীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। রাব্বী আমাকে বলেছে, “তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।” সে অসুস্থবোধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে দ্রুত তাকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

প্রক্টর আরও বলেন, রাব্বী খানের কাছে জানতে চেয়েছি কারা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। জবাবে রাব্বী খান বলেছে, সে বিস্তারিত পরে জানাবে। প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, রাব্বী খানের পরীক্ষা ছিল, এজন্য সে ক্যাম্পাসে এসেছে। কিন্তু আমাকে জানায়নি। তবে যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের নামে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষ সক্রিয় আছে। একপক্ষ মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর এবং অপরপক্ষ সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী। মেয়র পক্ষের নেতৃত্ব দেন মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত ও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে নেতৃত্বে দেন অমিত হাসান রক্তিম।

৫ জুলাই রাতে এই দুইপক্ষের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৭ জন আহত হয়েছিল। এ সংঘর্ষের পর ঈদুল আজহার ছুটি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০ জুলাই ক্যাম্পাস খুললেও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের গ্রুপ ক্যাম্পাসে যান না হামলার আশঙ্কায়। এই আশঙ্কা থেকে প্রতিমন্ত্রী অনুসারী ৪ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিল। নির্যাতনের শিকার রাব্বী খান তাদের অন্যতম।

যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039699077606201