নিরাপদ সড়ক চেয়ে শিক্ষার্থীরা মামলার হয়রানিতে - দৈনিকশিক্ষা

নিরাপদ সড়ক চেয়ে শিক্ষার্থীরা মামলার হয়রানিতে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রায় দেড় বছরের মাথায় এই মামলার বিচার শেষ হয়েছে। কিন্তু নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এখনো হয়রানির শিকার। তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো ঝুলে আছে। জামিনে থাকা এই শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের ভোগান্তির শেষ নেই। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন, এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর অনেকে তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এখন যুদ্ধটা করছেন নিজেরাই। কেউ কেউ চাকরি না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মামলার তথ্য থাকায় কারও পাসপোর্ট হয়নি, কারও কারও জন্য মামলার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁরা এই সমস্যার সুরাহা চান।

গত বছরের ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম (রাজীব) ও দিয়া খানম (মীম) নিহত হয়। এরপরই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঢাকায় ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান সরকারি দলের কিছু নেতা-কর্মী। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এর পরদিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর একই কায়দায় হামলা চালানো হয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ অবস্থাতেই হামলার শিকার হন। আর পুলিশ নামে-বেনামে শত শত শিক্ষার্থীকে আসামি করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা করে।

সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রসহ শত শত শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয় বুয়েটের শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস প্রধানসহ ৪০ জন এবং অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে। বাদী ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও র‍্যাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম অভিযোগে শিক্ষার্থীদের এখনো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার তিন শিক্ষার্থী সম্প্রতি হাজিরা দেওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন হাইকোর্ট থেকে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই বৈঠক হয়েছে। শিগগির এসব মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেছেন, যারা গুজব ছড়িয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গুজবের উৎস এখনো অজানা
রাজধানীর জিগাতলায় স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট। ওই দিন বিকেলে গুজব ছড়ানো হয় যে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে ছাত্রদের আটকে রাখা হয়েছে এবং ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গুজবের সূত্রপাত একটি ভিডিও, যে ভিডিওতে নেকাব ও গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা এক নারীকে গুজব প্রচার করতে দেখা যায়। এরপরই ডিএমপির সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ ২১টি আইডি, সিআইডি ১৮টি আইডিসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে।

অভিযোগ ছিল ফেসবুক, টুইটার, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগে বিভিন্ন উসকানিমূলক লেখা, পোস্ট, ফটো বা ভিডিওর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার লুমা ও শাখাওয়াত হোসেন।

এই মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল ডিএমপির সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের উপকমিশনার এ এফ এম কিবরিয়া, গুজবের উৎস এখনো শনাক্ত করা যায়নি। যারা ব্যাপকভাবে গুজব ছড়ায়, তাদের শনাক্ত করা হয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী লুৎফুন্নাহার গ্রেপ্তার হন সিরাজগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে। তিনিই ওই ভিডিও ছড়িয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। লুৎফুন্নাহার মনে করেন, মামলাটি ছিল হয়রানিমূলক।

গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন বুয়েটের শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস। ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বুয়েটের হলে গিয়ে দাইয়ানকে নাজেহাল করার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। ওই ভিডিওতে বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের আসামি মেহেদী হাসানকেও দেখা যায়। গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, দাইয়ান ফেসবুকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গুজব ছড়িয়েছেন। এরপরই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

দাইয়ান বলেন, ‘এত দিন চেষ্টার পরও পুলিশ আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। আমার একটাই দোষ, ফেসবুকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পক্ষে আমার একটা লেখা অনেক বেশি শেয়ার হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি মেহেদীর চোখে পড়লে তিনিই গোলাম রাব্বানীকে জানান ও পুলিশ ডাকেন।’

শিক্ষার্থীদের পাশে কেউ নেই
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোথাও কোথাও কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার আগেই হামলার শিকার হন। তারপরও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই তালিকা থেকে প্রাক্তন ছাত্ররাও বাদ যাননি। তাঁদের একজন কাঁকন বিশ্বাস।

গতকাল কাঁকন বলেন, কর্মস্থলে থেকেও তিনি মামলার আসামি হন। প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে এক দিন ছুটি নিয়ে আদালতে যান। তাঁর মতো আসামি হয়েছেন তাঁর অফিসের নিরাপত্তাকর্মীর ছেলেও। ছেলেটার লেখাপড়া শেষ পর্যায়ে। চাকরি হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তাঁর বাবা।

গ্রেপ্তার ২২ শিক্ষার্থীর একজন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল হক। গতকাল তিনি বলেন, তাঁর লেখাপড়া শেষ পর্যায়ে। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদন ফরমে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, তার উল্লেখ করতে হয়েছে। জাহিদুলের প্রশ্ন, তিনি মামলার কথা উল্লেখ করলে কোনো প্রতিষ্ঠান কি তাঁকে চাকরি দেবে?

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040030479431152