নিহত ছাত্রের মায়ের আহাজারি, পুলিশের অবহেলায় বোরহানের মৃত্যু হয়েছে - দৈনিকশিক্ষা

নিহত ছাত্রের মায়ের আহাজারি, পুলিশের অবহেলায় বোরহানের মৃত্যু হয়েছে

জি, এম ফারুক আলম, মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি |

‘আমার সোনারে ওরা চিকিৎসা না করিয়ে হাতকড়া পরিয়ে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখে। আমার সোনা কয়েকদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে, তার চিকিৎসা চলছে। এ কথা বলার পর পুলিশ চিকিৎসার কাগজপত্র আনার কথা বলে। দেবর বাড়ি থেকে কাগজপত্র নিয়ে তাদের দেখানোর পর আমার সোনারে ছেড়ে দিলে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয়। আমার সোনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা পূরণ হলো না। সবসময় দেশের জন্য ভাল কাজ করার কথা বলতো সে। আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন যশোরের মনিরামপুরে পিটুনিতে নিহত কলেজ ছাত্র বোরহান হোসেনের মা রঞ্জু বেগম।

মনিরামপুরে নিহত কলেজ ছাত্র বোরহান কবিরকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে এভাবে দীর্ঘক্ষণ হাতকড়া পরিয়ে রাজগঞ্জ পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা হয়।

নিহত কলেজ ছাত্র বোরহান হোসেনের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছিলো। চিৎকার দিয়ে ছেলের কথা বলছিলেন আর মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা রঞ্জু বেগম। মায়ের গগণ বিদারি কান্নায় উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। প্রতিবেশিসহ স্বজনদের শান্তনায় ছেলে হারানোর শোক চাপা দিতে পারছিলেন না মা রঞ্জু বেগম।  

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন নিহত বোরহান হোসেনের বাড়িতে গেলে এসব চিত্র দেখা যায়। এ সময়  তার মা রঞ্জু বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, সোনারে (বোরহান হোসেন) পড়ানোর জন্য আমি সেলাই সেন্টারে কাজ করি। তার বাবা আহসানুল কবিরও সংসারের হাল ধরতে এবং সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে ট্রেগার চালানোর পাশাপাশি অন্য কাজও করেন। 

নিহত বোরহানের নানা হামিদুল হক বলেন, তার নাতি ছেলে বোরহান মেধাবী ছাত্র ছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে এ প্লাসসহ বৃত্তি লাভ করে বোরহান। এসএসসি’তে ইসলাম ধর্ম ব্যতিত সব বিষয়ে প্লাস পায়। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয় মনিরামপুর সরকারি কলেজে। নিজের খরচ জোগাতে টিউশনি করতো বোরহান। হাসপাতালে না পাঠিয়ে হাতকড়া পরিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

গত শনিবার মোটরসাইকেল ছিনতাইকারি সন্দেহে কলেজ ছাত্র বোরহানকে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলার খালিয়া গ্রামে রাজগঞ্জ-হেলাঞ্চি সড়কের উপর ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে রাজগঞ্জ পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রে এনে বসিয়ে রাখা হয়। এ খবর পেয়ে নিহতের মা রঞ্জু বেগম তার দুই দেবর নাইম ও রিকনকে সাথে নিয়ে পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রে যান। 

সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিতে চাইলেও উদ্ধারকারী রাজগঞ্জ পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার নন্দী তাদের হাতে তুলে দেয়নি। বোরহান মানসিক রোগী এবং তার চিকিৎসা চলছে বলে ছেলেকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তপন কুমার নন্দী চিকিৎসার প্রমাণ চান। এ সময় বোরহানের চাচা সেখান থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে ফিরে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র এনে দেখানোর পর তাদের হাতে বোরহানকে তুলে দেয়। দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে বোরহানের স্বজনদের অভিযোগ।

খালিয়া গ্রামে গেলে প্রত্যক্ষদর্শি স্থানীয় দোকানদার হাবিবুর রহমান জানান, নাইম নামের সাগরা-কৃষ্ণবাটি গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে তার মোটর সাইকেল ছিনতাই করার চেষ্টা করছে বলেই দৌড়ে লাঠি নিয়ে বোরহানকে মারপিট করতে থাকে। নাইমের পিছু নিয়ে হাবিব সেখানে যাবার আগেই বোরহানকে মেরে রাস্তার পাশে মসুরি ক্ষেতে ফেলে রাখে। তিনি তুলতেই বোরহানকে আবার পেটান নাইম। সেখানে আরেক যুবকও বোরহানকে মারপিট করে। 

এ সময় এক বৃদ্ধা ঠেকাতে গেলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে নাইম। পরে রাজগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে বোরহানকে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নাইম আটক হলেও অপর যুবক রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাইমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে জড়িতদের নাম দাবি নিহতের স্বজনদের। অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি পুলিশ কর্মকর্তা তপন কুমার নন্দী। তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক শাহাজান জানান, বিষয়টি এসআই তপন কুমার নন্দীই ভাল বলতে পারবেন।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050389766693115