ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, আমার মনে হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতিটার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যার জন্য আসলে আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকাটা প্রয়োজন। কারণ প্রত্যেকটা ঘটনা যারা ঘটায়, যে সকল ব্যক্তিরা ঘটাচ্ছে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত। আমি মনে করি ধর্ষকের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে নেই। সে ধর্ষকই, সে নিপীড়নকারী ও সে নির্যাতনকারী। সেই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই আমাদের দেখা উচিত।
ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, রাজনৈতিকভাবে যারা আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকে স্থানীয়ভাবে, প্রশ্রয়ের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বিচার যেমন হতে হবে এই ঘটনায় যারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন, সেই সঙ্গে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাহলে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
একই সঙ্গে তারা বলেছেন, নুসরাত এক ব্যতিক্রমী নাম, কারণ নুসরাত এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সে চলে গেছে তবে সে এক সাহসী কণ্ঠস্বর।
প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে, ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে মামলার দ্বিতীয় আসামি নূর উদ্দিন ও তৃতীয় আসামি শামীম জবানবন্দি দিয়েছেন।