ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় গতকাল রোববার (২২ জুলাই) আরো চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মামুনুর রশিদ তাঁদের জবানবন্দি নেন। এ পর্যন্ত ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো।
চার সাক্ষীর একজন সোনাগাজী বাজারের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবসায়ী মো. আকবর জানিয়েছেন, ঘটনার পর এ মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম তাঁকে ফোন করে জানান যে নুসরাত নিজের গায়ে নিজেই আগুন দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল মাদরাসা-কাম-সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর আসামিরা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালায়।
এর আগে ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় মাদরাসার অধ্যক্ষ (বর্তমানে বরখাস্ত) সিরাজ উদ দৌলাকে। এ মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় তাঁর নির্দেশে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তাঁর অনুসারীরা। এর আগে তারা সিরাজের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, গতকাল যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী মো. আকবর ছাড়াও ছিল নুসরাতের সহপাঠী তাহমিনা আক্তার, বিবি হাজেরা ও আমিরাবাদ আলিম মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী আবু বকর ছিদ্দিক।
আদালত সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী মো. আকবর তাঁর সাক্ষ্যে বলেছেন, অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পরদিন সোনাগাজীতে তাঁর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়। এতে অন্য অনেকের সঙ্গে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন। সমাবেশে এ মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়।
তিনি বলেছেন, ‘নুসরাতের গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে আমাকে ফোন করে শাহাদাত হোসেন শামীম। সে আমাকে বলে, হুজুরের (সিরাজ) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা মেয়েটি মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি? আমি বলি, এ বিষয়ে আমি জানি না। ঠিক আছে, খবর নিচ্ছি।’
আরেক সাক্ষী নুসরাতের সহপাঠী তাহমিনা আক্তার বলে, ঘটনার দিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাদের হল সুপার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেন। কিছুক্ষণ পর কামরুন নাহার মণি হলে প্রবেশ করে। হল সুপার বেলায়েত হোসেন দেরি করে পরীক্ষা হলে আসার কারণ জানতে চান মণির কাছে। জবাবে মণি জানায় তার পেট ব্যথা, সে জন্য দেরি হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনে সবাই কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলেও মণি বের হয়নি। সে তার আসনেই বসা ছিল। আরেক সাক্ষী বিবি হাজেরার সাক্ষ্যও একই রকম হওয়ায় আদালত ‘উভয়ের একই বক্তব্য’ হিসেবে তা লিপিবদ্ধ করেন। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িতদের মধ্যে আসামি কামরুন নাহার মণি অন্যতম।
সাক্ষীরা জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।
গত ২৭ জুন থেকে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আজ সোমবার আরো পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে বলে পিপি জানিয়েছেন।