যে গ্লাসে করে নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় সে গ্লাসটি আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার দফতরের সামনের ওয়াল কেবিনেটের ভেতর থেকে গ্লাসটি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার বিকালে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দল নতুন করে রিমান্ডে নেয়া শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, জাবেদ হোসেন ও যোবায়ের আহম্মদকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে এটি উদ্ধার করে।
বুধবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন তাদের ১ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। এর আগে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম সন্ধ্যায় গ্লাসটি উদ্ধারের কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের নিয়ে মাদ্রাসায় যায় পিবিআই। পরে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের দফতরের সামনের ওয়াল কেবিনেট থেকে গ্লাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, পরিদর্শক মোনায়েম হোসেন, পরিদর্শক লুৎফুর রহমানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের তিনজনকে ফেনীর পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সময় বোরকা পরিহিত থাকা শাহাদাত হোসেন শামীম ও যোবায়ের আহম্মদের দুটি বোরকা উদ্ধার করা হয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত। এ সময় কয়েকজন তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দেয়া হয়।
মামলায় এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ্দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মণি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং ওই মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।
এদিকে আরও চার আসামি রিমান্ডে রয়েছে। পিবিআইয়ের আশাবাদ, তারাও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেবে। এরই মধ্যে তারা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সব আসামির জবানবন্দি নেয়ার কাজ শেষ হলে অভিযোগপত্র তৈরির কাজে হাত দেয়া হবে। চলতি মাসের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হল- নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মণি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল।