পরিকল্পিত পথে শিক্ষা এগিয়ে যাবে - দৈনিকশিক্ষা

পরিকল্পিত পথে শিক্ষা এগিয়ে যাবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্বের কারো কাছে বোধ করি এখন করোনার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। অসংখ্য জীবনাবসান ছাড়াও অর্থনীতির মেরুদণ্ডে ফাটল ধরেছে সর্বত্র। কর্মহীন-অন্নহীন মানুষের সংখ্যা কমছে না। এরই প্রেক্ষাপটে গত ৩১ মে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ভাগ্যিস, বাংলাদেশে করোনা আতঙ্ক শুরুর আগেই মাধ্যমিকের পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে আমরা যাব না। কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ করে আসছি, ফল প্রকাশের পর কিছু শিক্ষাপ্রেমী মাতম শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা বোধ করি তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না, এমনকি কারো কারো ভাগ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন শূন্য না থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ জুটবে না। আয়োজন শেষে দেখা গেছে, অনেক হাটতলা-বটতলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম রয়ে গেছে। বুধবার (১ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, এবারের কভিড মহামারির আতঙ্কে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাস কিংবা মাতম কিছুই হয়নি। অর্থনীতিবিদ মার্শাল মনে করতেন, প্রকৃতি তার স্বচ্ছন্দ গতি সাবলীল রাখতে নিজ হাতে আবিলতা মুক্ত করে। এতে অনেক মূল্যবান প্রাণ নষ্ট হয়, তবে প্রলয়ের পর নতুন পৃথিবী প্রজন্মকে করে উজ্জীবিত। রবীন্দ্রনাথের কথায় বলা যায়, ‘আশাহীন শ্রান্ত আশা/টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ কুয়াশা/বিশ্বময়’ নিয়ে সবার প্রতীক্ষার পালা রেখে যায়। কারণ আশা যে মরে না। করোনাবিধ্বস্ত হলেও আশা জেগে থাকে প্রাণের ক্রন্দনে। আমাদের আশা-জাগানিয়া মনোভাব নিয়েই আমরা প্রস্তুতি নেব। কেবল কথার ফানুস নয়, কর্মব্রতের মাধ্যমে।

আজকের দিনে সর্বস্তরের মানুষ শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। পারতপক্ষে সন্তানকে শিক্ষাবিমুখ করতে চায় না। নিদারুণ কষ্ট করে সন্তানকে বিদ্যালয়মুখী করে। স্বপ্ন দেখে, ‘লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সেই।’ লেখাপড়া করে অনেকের গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ মিলেছে বলে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের কিছুটা রূপ বদলেছে। তবে দুর্ভাগ্য-দুর্গতির অভিজ্ঞতাসিঞ্চিত ব্যক্তি অবলীলায় ভুলে যায় তার অভিজ্ঞতার কথা, ফলে সমাজ যেভাবে পরিবর্তিত অবয়বে ফিরে দাঁড়ানোর কথা, তা হয়ে ওঠে না। করোনার পাশে যেন সব মূল্যবোধের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষ যা কিছু পায়, লুটেপুটে খেতে চায়। করোনা বিপর্যস্ত সময়েও থেমে নেই। এ রোগ হঠাৎ গজিয়ে ওঠেনি। দীর্ঘ সময়ের দুর্নীতিগ্রস্ততার এটা আংশিক প্রকাশ।

বৈষম্যহীন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে উঠছে না আমাদের কোনো ক্ষেত্রেই। নগদ প্রাপ্তির জন্য সবাই উন্মুখ। সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে আমরা শিক্ষাকে বেকার পুনর্বাসনকেন্দ্রের পর্যায়ে নিয়ে গেছি পরিকল্পনাহীনভাবে।

করোনার বিষ আমাদের ২০২০-এর শিক্ষার ভুবনকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে। ২০ একটি সংখ্যা, সংস্কৃতে বিংশতি। আমরা যাকে কুড়িও বলি। এগুলো নিরাবয়ব সংখ্যাবাচক শব্দ। আর বিষ অবয়বী পদার্থ, যা দেহে ঢুকলে মৃত্যু বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি অনিবার্য। এর প্রতিশব্দ গরল, হলাহল ইত্যাদি। এই বিষে সারা বিশ্ব আক্রান্ত। একদা আমাদের দাদি-নানিরা প্রবচন বলতেন, ‘সাপের লেখা আর বাঘের দেখা’। এর অর্থ হলো, ভাগ্যে সাপের বিষে মৃত্যু থাকলে লোহার ঘরে অবস্থান করলেও তাকে সাপের বিষে মরতে হবে। পক্ষান্তরে হিংস্র প্রাণী বাঘ মানুষের ওপর হামলে পড়লে আর রক্ষার উপায় নেই। প্রকৃতির ভারসাম্য ধ্বংসকারী সভ্যতা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত বিজ্ঞানের অবদানে বাঘের ভয় আর সাপের বিষের কার্যকারিতা নিয়ে এখন প্রবচন সৃষ্টি হয় না। তবে এই যে করোনা বিষ, অবয়বী না হয়েও এমন সাংঘাতিক ছোঁয়াচে যে মানুষে-মানুষে মিলন তার ‘চোখের বিষ’। এ অবস্থায় আমাদের মতো এই দরিদ্র দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা অনেকটা অকল্পনীয়। এখন পর্যন্ত ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। এতে দেশের বড়জোর ২০ শতাংশ ভাগ্যবান শিক্ষার্থী সেই সুযোগ পাচ্ছে। বাকি ৮০ শতাংশের ভাগ্যে শূন্য। এরা বেশির ভাগই ভাগ্যাহতদের আশাবাদী সন্তান।

আমাদের শিক্ষা সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থায় চলছে না। এটা নতুন কথা নয়। রাতারাতি তা সময়োপযোগী করা সহজ নয়। তবে আমাদের ভাবতে হবে, তথাকথিত উচ্চশিক্ষার ‘মারি’ জাতির উন্নয়নের জন্য কতটুকু সহায়ক। একমুখী শিক্ষার পক্ষে জোর আলোচনা শোনা গেছে। এটা কার্যকর করতে পারলে শিক্ষাবিষয়ক অপচয় কমবে কিছুটা। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ ভাবছেন, শিক্ষাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হবে। ক্ষমতাবানদের তোষণ আর আত্মজ পোষ্যদের পোষণের সিলসিলা জারি থাকলে, বাজেট বরাদ্দ যা-ই হোক, শিক্ষার উন্নয়ন সুদূরপরাহত।

আমরা আশায় বুক বাঁধব, করোনা অচিরে পরাভূত হবে, সম্মিলিত শুভকামী মানব প্রচেষ্টায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিকল্পিত পথে শিক্ষা এগিয়ে যাবে। আমরা ‘নিশিদিন’ ‘ভরসা’ রাখব—‘হবেই হবে’।

লেখক : সাবেক শিক্ষক

রাজশাহী কলেজ

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034961700439453