পরীক্ষার্থী নয় শিক্ষার্থী চাই - Dainikshiksha

পরীক্ষার্থী নয় শিক্ষার্থী চাই

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

শিক্ষার মান ও শিক্ষকের মর্যাদা-দু'টো বিষয়ের এখন বড় টানাপোড়েন । আজকাল স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। শেখার জন্যে কেউ তেমন একটা লেখাপড়া করে না। যেটুকু করে সে কেবল পরীক্ষা পাসের  জন্যে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক সকলের লক্ষ্য একটিই। যে করে হোক, পরীক্ষায় পাস চাই। তাই দিনে দিনে দেশে শিক্ষার্থীশূন্যতা যেমন প্রকট হয়ে উঠছে, তেমনি দেশটা পরীক্ষার্থীতে ভরে যাচ্ছে। একেকটা পরীক্ষা কেন্দ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে পরীক্ষার্থী। এদের মাঝে ক'জন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে? এর ফলে শিক্ষা তার আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে এখন ভিন্ন পথ ধরতে বসেছে । আমাদের শিক্ষার মানে তাই চরম ধ্বস। এ কারো কাম্য নয়।

পরীক্ষায় পাসের হার বাড়াবার এক অশুভ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে আমরা আমাদের প্রজন্মটাকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার ফল বেরোলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হার বাড়াবার অদৃশ্য প্রতিযোগিতার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কোন বোর্ডে এ + বেশি এবং কোন বোর্ডের চেয়ে কোন বোর্ডে পাসের হার কম বা বেশি সে নিয়ে বলাবলির শেষ নেই। একবার কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার সবার চেয়ে কম হয়েছিল। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কত লেখালেখি হয়েছে। বোর্ডের কর্মকর্তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী তুলে গালমন্দ করা হয়েছে। আমাদের ভাবটা যেন এমন, পড়াশোনা করলে করুক আর না করলে নাই, কিন্তু পরীক্ষা দিলে পাস হওয়া চাই । আমাদের এ ধ্যান-ধারণা কবে পাল্টাবে জানি না। কিন্তু এর পরিবর্তন ছাড়া প্রজন্মকে বাঁচানো কঠিন। 

কেবল বোর্ডে বোর্ডে প্রতিযোগিতা নয়। এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেকটা প্রতিষ্ঠানের পাসের হার ও এ + নিয়ে প্রতিযোগিতা। অভিভাবকে অভিভাবকেও এ নিয়ে প্রতিযোগিতা। অমুকের ছেলে এ + পেয়েছে তো তমুকের ছেলের গোল্ডেন এ + পাওয়া চাই । লেখাপড়ার মান নিয়ে আমাদের কোন প্রতিযোগিতা নেই। এ আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে আজ ভেবে দেখার উপযুক্ত সময় ।
 
স্কুল-কলেজে মেধাবী শিক্ষকের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়টির দিকে কারো খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। মেধাবী শিক্ষক ছাড়া স্কুল কলেজে মেধাবী শিক্ষার্থী আশা করা কঠিন। শিক্ষার্থী মেধাবী না হলে মেধাবী প্রজন্ম আমরা কোথায় পাব?  মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। উল্টো শিক্ষকের ন্যায্য দাবি দাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখার জন্যে যা যা করা লাগে, তা করার লোকের অভাব নেই । শিক্ষকদের আজকাল আর আগের সে মান মর্যাদা নেই। যখন তখন যেখানে সেখানে শিক্ষকদের অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা ম্যানেজিং কমিটির হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হবার বিষয়টি আমাদের দেশে এখন আর নতুন কোন খবর নয়। 
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়া না পারলে কিংবা দুষ্টুমি করলে শিক্ষকরা ছাত্রদের এক আধটু শাস্তি দিতেন। পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবক সকলেই এ শাস্তি দেবার বিষয়টিকে ভাল দৃষ্টিতে দেখতেন। কিন্তু এখন?  শিক্ষার্থীদের কোন শাস্তি দেয়া যাবে না। এ জন্যে উল্টো শিক্ষককে শাস্তি দেবার বিধান করা হয়েছে। এ বিধানের সুবাদে এ পর্যন্ত দেশে কত নিরীহ শিক্ষক জেল-জুলুম পর্যন্ত খেটেছেন তার হিসেবে কে রেখেছে?  অধিকন্তু আজকালের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের মাথায় চড়ে বসতে শুরু করেছে। পড়াশোনার নামগন্ধ নেই। বইয়ের ধারে কাছে ঘেঁষতে চায় না। পাঠ্য পুস্তকের সাথে তাদের সখ্যতা একেবার কম। এ করে আমাদের শিক্ষার মান কেবলি তলানির দিকে যাচ্ছে ।

আমাদের অনেক পরীক্ষা। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি,  এসএসসি। আরো কত পরীক্ষা। কেবল পরীক্ষা দেবার জন্যে আমাদের লেখাপড়া ?  ভাবসাব তো তাই। এতো পরীক্ষা দিয়ে কী লাভ হচ্ছে সে আজ ভেবে দেখা অতীব জরুরি। লাভ না থাকলে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা দু'টো বাদ দেয়া দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার্থী বানিয়ে লাভ নেই। তারা যেন সত্যিকারের শিক্ষার্থী হয়ে উঠতে পারে, সে দিকে সকলের নজর দেয়া একান্ত অপরিহার্য। 

পড়ার অনেকগুলো বিষয়। বইয়ের নিচে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা চাপা পড়ে যাচ্ছে। আইসিটি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে হেন তেন বিষয়গুলো বাদ দেয়া দরকার। আগামি প্রজন্মকে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবার জন্যে শিক্ষায় আজে বাজে ও যা তা যে কিছু আছে, তা পরিহার করা দরকার। অন্যথায় বিশ্বব্যাপী ম্যারাথন দৌড়ে আমরা কেবলি পিছিয়ে পড়ে থাকব। 


লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট,  সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039658546447754