পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ - দৈনিকশিক্ষা

ছেলের ফল জালিয়াতি প্রমাণিতপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথের এইচএসসি পরীক্ষার ফল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ জন্য নারায়ণের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগ। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নারায়ণ ও তাঁর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বোর্ডকে।

শিক্ষাবোর্ড সচিব পুত্রের নম্বর জালিয়াতির প্রমাণ দৈনিক আমাদের বার্তার কাছেও আছে। এতে দেখা গেছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসচির ফলাফলে রচনামূলক প্রশ্নে অন্তত ৮টি বিষয়ের নম্বর নারায়ণপুত্রের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর নৈর্ব্যক্তিক অংশে বাড়ানো হয়েছে অন্তত ৬টি বিষয়ের নম্বর। 

সবচেয়ে বেশী নম্বর বাড়ানো হয়েছে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের রচনামূলক অংশে। ওই বিষয়ে তিনি প্রকৃত নম্বর পেয়েছিলেন ৫৭। তা ২৪ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তার প্রকৃত নম্বর ছিলো ২৭। তা ১৮ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫। এছাড়া বাংলা প্রথমপত্র, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, রসায়ন প্রথমপত্র ও জীববিজ্ঞান প্রথমপত্রে ১০ করে এবং পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রে ৮ ও উচ্চতর গণিত দ্বিতীয়পত্রে ৭ নম্বর বাড়ানো হয়েছে রচনামূলক অংশে।  

 

আর নৈর্ব্যক্তিক অংশে সর্বোচ্চ ১১ নম্বর বাড়ানো হয়েছে উচ্চতর গণিত প্রথমপত্রে। এছাড়া রসায়ন দ্বিতীয়পত্রে ৪, রসায়ন প্রথমপত্র এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৩, বাংলা প্রথমপত্র ও পদার্থ দ্বিতীয়পত্রে ২ নম্বর করে বাড়ানো হয়েছে। মার্কশিট সরিয়ে ফেলায় অন্য বিষয়গুলোর প্রকৃত নম্বর পাওয়া সম্ভব হয়নি। 

বোর্ড সূত্র জানায়, নক্ষত্র দেবনাথের ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসির ফলাফলে অসংগতি ধরা পড়ে। একইভাবে ২০২৩ এর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জালিয়াতির অভিযোগও সামনে আসে।

এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক নারায়ণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তাকে শিক্ষা বোর্ড থেকে সরিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা এখন সে অনুযায়ী কাজ করব।

প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে নারায়ণ নাথের বিরুদ্ধে ওঠা ফলাফল কেলেঙ্কারি, ছেলের ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে তদন্তের মূল্যবান আলামত নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে। গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) মোহাম্মদ দিদারুল আলম।  

 
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে আমার অফিস কক্ষে ৩টি ট্রাংকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা-২০২৩ এর শিক্ষার্থীদের লক্ষাধিক নম্বরফর্দ (মার্কশিট) রক্ষিত ছিল। গত ১৯ মে সকাল ১০টার দিকে আমি দেখি, ৩টি ট্রাংকের মধ্যে ১টি ট্রাংকের লাগানো তালা নেই। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করি।

তিনি আরো বলেন, পরে ৩ জুন বিকাল ৩টার দিকে ভাঙ্গা ট্রাংকটি তদন্ত কমিটির নির্দেশক্রমে শিক্ষা বোর্ডের ২ জন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পর্যালোচনা করে দেখি ট্রাংকটিতে শিক্ষার্থীদের দুটি নম্বরফর্দ নেই। ওই দুই মার্কশিটের মধ্যে নক্ষত্র নাথের মার্কশিটও ছিলো। 

উল্লেখ্য, নারায়ণচন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বোর্ডের নিয়মানুযায়ী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গেলে দেখেন কে বা কারা আগে থেকে সব বিষয়ের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। পরে ছেলের পক্ষে তার মা বনশ্রী নাথ পাঁচলাইশ থানায় গত ৪ ডিসেম্বর জিডি করেন। সেই জিডিতে কে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন তা বের করার আবেদন জানানো হয়। তারপর থেকে ঘটতে থাকে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা। অবশেষে ফল জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণ হয়।  

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

বেতন ও বিবেকের স্বাধীনতায় পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকরা - dainik shiksha বেতন ও বিবেকের স্বাধীনতায় পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকরা দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে - dainik shiksha দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি শুরু - dainik shiksha বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি শুরু শিক্ষকদের কথার মূল্যায়ন: শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন সামাজিক চুক্তি - dainik shiksha শিক্ষকদের কথার মূল্যায়ন: শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন সামাজিক চুক্তি বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রত্যাশা - dainik shiksha বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রত্যাশা শিক্ষকের কণ্ঠস্বর হোক সামাজিক অঙ্গীকার - dainik shiksha শিক্ষকের কণ্ঠস্বর হোক সামাজিক অঙ্গীকার কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033001899719238