পহেলা বৈশাখের ছুটি মানে না পটুয়াখালীর এক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। সারাদেশের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা যখন বৈশাখী উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা ঠিক তখন পরীক্ষায় ব্যস্ত কলাপাড়ার এই মাদরাসার ৬০ শিশু। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের আল মাজীদ ইসলামী কিন্ডার গার্টেন নুরানী মাদরাসায় রোববার সকালে এই পরীক্ষা হয়।
পহেলা বৈশাখের ছুটির দিনে পরীক্ষা নেয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলছে সরকারি ছুটি তাতে কী, আমাদের মাদরাসা চলে হাটহাজারীর মাদরাসার নিয়মে।
মাদরাসা সূত্রে জানাযায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হাদী এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত করেন। শিশু থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৬০ জন। শিশু শ্রেণিতে ২০, প্রথম শ্রেণিতে ১৮, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৬ ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৬ শিক্ষার্থীর রোববার আরবী বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হয়।
কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই নামে কোন মাদরাসার তথ্য তাদের জানা নেই। কিন্তু সরকারি ছুটিতে কীভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো তাঁরা খোজ নিয়ে দেখছেন।
একাধিক শিশু শিক্ষার্থী জানায়, ভোর হওয়ার সাথে সাথেই তারা মাদরাসায় চলে এসেছে। তাদের বাড়ির পাশের বন্ধুরা যখন বৈশাখী মেলায় ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দিতে নতুন জামা-কাপড় পড়ে গিয়েছে তখন খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে হুজুররা মন্দ বলবে তাই তারা পরীক্ষা দিয়েছেন। তারা আরও জানায়,মাদরাসায় বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শোক দিবস কিছুই পালন করা হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানায়, এই মাদরাসায় সরকারি কোনও দিবসই পালন করা হয় না। তাদের পাঠ্যবইও আসে চট্রগামের হাটহাজীরা থেকে। তারাও শিক্ষকদের পহেলা বৈশাখে পরীক্ষা না নেয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু মুসলমানদের এটা উৎসব না বলে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীদের।
মাদরাসার সুপার মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ ও সহকারি শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলাম জানান, তারা এক সপ্তাহ আগে রুটিন দিয়েছেঁন পরীক্ষার জন্য। মাদরাসার পরিচালক তাদের পরীক্ষা নিতে বলেছেন। মাদরাসায় সরকারি নিয়মে চলে কীনা জানতে চাইলে তারা বলেন, হাটহাজারী মাদরাসার নিয়মে চলে।
মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুল হাদী জানান, সরকারি বন্ধের দিন পরীক্ষা নেয়া ঠিক হয়নি। এরপর থেকে এই ভুল হবে না।
কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, এই মাদরাসার কোন তথ্য তাঁদের জানা নেই। সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমানের নির্দেশে সুপারকে মাদরাসার সকল কাগজপত্র নিয়ে আজকের মধ্যে (১৪ এপ্রিল) দেখা করতে বলা হয়েছে। কীভাবে কোন নিয়মে মাদরাসা চলছে তা তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।