৭১’এর পাকসেনা ও আবরারের ঘাতকদের সাদৃশ্য তুলে ধরেছেন বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে পঞ্চম দিনের মত আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন। বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশ ও আশপাশে আবরার হত্যার প্রতিবাদ, হত্যাকারীদের শাস্তি ও তাকে হারানোর আর্তনাদের চিত্র ফুটে উঠছিল বিভিন্ন দেয়াল লিখন, ব্যানারে।
এসবের মধ্যে একটি ব্যানারে চোখ আটকে যায় সবার। কালো ব্যানারে লাল ও সাদা রঙে লেখা–
১৯৭১ :
-ঠক্! ঠক্! ঠক্!
-কে?
-স্যার, একটু বাইরে আসবেন? কথা ছিল!
২০১৯ :
-ঠক্! ঠক্! ঠক্!
-কে?
-তোকে বড় ভাইরা ডাকছে, বাইর আয়!
আবরারকে হত্যার আগে তাকেও ‘বড় ভাইরা’ ডাকছে বলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই ব্যানারটিতে একাত্তরের বুদ্ধিজীবি ঘাতক পাকসেনাদের সাথে আবরারকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতদের সাদৃশ্য তুলে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যার প্রতিবাদে বুয়েটে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থী ব্যানারটির বিষয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার আর্মি দিয়ে এই কাজ করেছিল। এখন ছাত্র সংগঠন দিয়ে এই কাজ করছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারগুলো।’
তারা আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটা সরকারের একটা করে ছাত্র সংগঠন ছিল, এখনও আছে। এই ছাত্র সংগঠনগুলো সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে।’
ঢাবির এই দুই শিক্ষার্থী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ভিন্ন মতাদর্শী শিক্ষার্থীদের দমানোর জন্য সব সময়ই ছাত্র সংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনীর মত ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সামরিক সরকার–সবাই এ কাজ করেছে।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আজ পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।