পাকিস্তানি ব্যুরোক্র্যাটিক লিগ্যাসিতেই বৈষম্যের শিকার শিক্ষা ক্যাডার - দৈনিকশিক্ষা

পাকিস্তানি ব্যুরোক্র্যাটিক লিগ্যাসিতেই বৈষম্যের শিকার শিক্ষা ক্যাডার

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |
পদোন্নতি, গ্রেড, অর্জিত ছুটি নিয়ে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও শিক্ষার দপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সমিতির নেতারা দাবি করেছেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারকে বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা মনে করছেন, শিক্ষা ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
 
সমিতির নেতারা বলছেন, সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্যাডারবান্ধব নানা সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর মতে, পাকিস্তানি বা ব্রিটিশ ব্যুরোক্র্যাটিক লিগ্যাসির কারণেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।
 
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরা ও তা নিরসনে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলো। 
 
নির্ধারিত সময়ের পৌণে এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু করা সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মানা, অধ্যাপকদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত না করা, শিক্ষা ক্যাডরের পদে অন্যান্যদের পদায়ন, শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজন না করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সমিতির নেতারা। এসব বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামী সোমবার (২ অক্টোবর) কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আর ওইদিন কর্মবিরতি পালনের পরও সরকার দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, ডিআইএ, শিক্ষার আঞ্চলিক কার্যালয় ও সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন দাবি ও কর্মসূচি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে নেতারা বলেছেন, অবশ্যই তা নয়।  

শিক্ষা ক্যাডার বৈষম্যের শিকার হওয়ার মূল কারণ জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি পদে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস প্রস্ফুটিত করবার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেসব উদ্যোগ নেয়ার পথে বাধা আছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমাদের প্রশাসনে যারা রয়েছেন তাদের দিক থেকে মূল বাধাটা আসে। ফলে আমাদের রাজনৈতিক সরকারের বিভিন্ন সদিচ্ছা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও বাস্তবায়ন হয় না। শাহেদুল দাবি করেন, শিক্ষা ক্যাডারকে বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শিক্ষা ক্যাডারকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমরা সব সময় আমাদের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়গুলো জানানো চেষ্টা করেছি। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত যারা বাস্তবায়ন করবেন তাদের তা বাস্তবায়নে বাধ্য করতেই আমাদের এই অবস্থান। 

কেনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহেদ আরো বলেন, বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। জনপ্রশাসন, অর্থসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়। আমরা অনেক সময় দেখি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজটি সম্পন্ন হলেও অন্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি আটকে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে, এটি হচ্ছে বাস্তবতা। যেকোনো ক্যাডার সার্ভিসেরই নিজস্বতা রয়েছে, সে অনুযায়ী সার্ভিসগুলো তৈরি হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রত্যাশা করেছিলেন পেশাজীবীদের দ্বারা প্রশাসন যন্ত্র গড়ে উঠবে। তবে ৭৫ পরবর্তী সময়ে দেখেছি পাকিস্তানি বা ব্রিটিশ ব্যুরোক্র্যাটিক যে লিগ্যাসি সেটি আমরা ক্যারি করছি। ফলে দেখা যায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। 

তিনি আরো অভিযোগ করেন, শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর থেকে শিক্ষা ক্যাডারদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ পদে শিক্ষা ক্যাডারের বাইরের কেউ থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করে মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছেন না। একই পরিস্থিতি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরেও। 
 
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা অভিযোগ তোলেন, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে তিন হাজার জন অপেক্ষায় থাকলেও মাত্র ৬৯০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি শূন্যপদের বিবেচনা না হলেও শূন্যপদ না থাকার অজুহাতে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। মোট সাত হাজার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সব ক্যাডারের বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তাবায়িত হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দীর্ঘ নয় বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভুত করে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন। 
 
এ পরিস্থিতিতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষা ক্যাডারকে ননভ্যাকেশন সার্ভিস ঘোষণা করে অর্জিত ছুটি দেয়া, ক্যাডার কম্পোজিশন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি বাতিল করা, শিক্ষা ক্যাডারের পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের প্রত্যাহার ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের দাবি জানান। এসব দাবি আদায়ে আগামী ২ অক্টোবর (সোমবার) কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা ও সরকার দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা। তারা বলেন, কর্মবিরতির দিন তারা নিজ নিজ দপ্তরে যাবেন ও বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করবেন, তবে কোনো কাজ করবেন না। 
 
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে জেলা উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার দাবিও জানানো হয়। এ প্রশাসন কেমন হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহেদ জানান, তারা চাচ্ছেন বর্তমানে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা থাকবেন তবে তাদের নেতৃত্ব দেবে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। উপজেলা ও জেলার শিক্ষা প্রশাসন গড়ে উঠলে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারিকৃত কলেজগুলো তদারকি করতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংঠনের মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা। আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সচিব বিপুল চন্দ্র সরকার ও সংগঠনের অন্যরা।
 
উল্লেখ্য, সেনাশাসক জিয়াউর রহমান অন্যান্য কয়েকটি ক্যাডারের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারও সৃষ্টি করেন। তার আগে সরকারি কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষা সার্ভিসের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিস। 
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055079460144043