পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত বিষয় - Dainikshiksha

পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত বিষয়

মেনহাজুল ইসলাম তারেক |

অষ্টম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে জীবন দক্ষতা শেখানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে মেয়েদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে বলে আমি মনে করছি। যৌন নিপীড়ন থেকে মেয়েদের বাঁচাতে কিছু আত্মরক্ষার ‘কৌশল’ শেখাতে গিয়ে তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা তো আমাদের উচিত নয়। কেননা কিছু জায়গায় ব্যবহূত ভাষা নিয়ে চরম আপত্তি আছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে বইয়ে বলা হয়েছে—বাড়িতে কখনোই একা না থাকা, অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা, মন্দ স্পর্শ করলে এড়িয়ে যেতে হবে অথবা পরিত্যাগ করতে হবে, পরিচিত-অপরিচিত কারোর সঙ্গে ঘুরতে না যাওয়া। আর বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার পাঠ দেওয়া হয়েছে।

এই অধ্যায়ে মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, যৌন নিপীড়ন, বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। যৌন হয়রানির পরিস্থিতিতে করণীয় বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, পাড়ার বখাটেদের কথা-কাজের সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখানো কৌশল অবলম্বন করা। যেমন জুতা খুলে দেখানো, চড় দেখানো, গালাগাল না করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানো। শুধু অধ্যায় না, ছবি ব্যবহারেও জেন্ডার সংবেদনশীলতা নেই বললেই চলে। বইয়ের ১১১ পাতায় রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি দেখাতে গিয়ে নারীর রান্না করার ছবি দিলেও কৈশোরের বন্ধুত্ব বিষয়ে বলতে গিয়ে তখন দুজন ছেলের ছবি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের উপস্থাপন মেয়েদের মানসিক বিকাশকে শুধু বাধাগ্রস্তই করবে না, এটা রীতিমত অন্যায়ই বলা চলে।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে একজন কিশোরীকে কী শেখানো হবে, তার মাথায় কোন বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসানো হবে সে বিষয়ে সতর্কতাও জরুরি। নারীর চলাফেরা, স্বাধীন পোশাকে বাধা দেওয়া বা আরোপিত বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে আসলে মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। শুরুতেই এমন হলে সে নিজেকে গুটিয়ে রাখবে। ২০১২ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটি ২০১৪ সালে পরিমার্জিত সংস্করণ হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পুনঃর্মুদ্রণও করা হয়। কিন্তু তারপরও বইগুলো থেকে এসব বিতর্কিত বিষয় সরানো হয়নি! পোশাক সাবধানতা ও বাড়িতে একা না থাকার বিষয়ে, বাড়িতে একা না থাকার কথা না লিখে, একা সাবধানে থাকার কথা লেখা দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়। এ ধরনের পাঠ্যক্রম নারীকে অধিকার সচেতন বা সাবধান করবে এমন না। এটি কিশোরী মেয়েটির স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করবে। নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে মেয়ে শিশু বড় হয়, এটি আজকের সময়েই কেবল ঘটছে তা নয়। এসব বরাবরই ছিল, হয়তোবা থাকবেও। কিন্তু এত দিনের আন্দোলনের পরও এখনো এমন চললে, আমরা আসলেই পিছিয়ে পড়ব। যে গ্রামের মেয়েদের কথা বলে এসব পাঠ্যপুস্তকে ঢোকানো হচ্ছে, সেই গ্রামের মেয়েরাই ফুটবল খেলে দেখিয়ে দিয়েছে—এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এসব জেন্ডার অসংবেদনশীল লেখা পাঠ্যপুস্তক থেকে দ্রুত সরানো হোক।

পাঠ্যপুস্তকে যা শেখানো হবে, আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতা ঠিক সেভাবেই গড়ে উঠবে। ফলে যে বয়সে তার পৃথিবীটা চেনার কথা, সে বয়সে পুরুষকে তার শত্রু হিসেবে জানতে শিখবে। পরবর্তী জীবনে সেটির যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাই এ ব্যাপারে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দিনাজপুর

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028259754180908