নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণ কাজের শেষ সময়ে এসে বাধার মুখে পড়ল বই ও কাগজের মান যাচাইয়ে সরকার নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিকের বই ও কাগজের মান যাচাইয়ের সরকার নির্ধারিত এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্ভিসেস বিডির কাজে অসহযোগিতা ও বাধাদানের অভিযোগ উঠেছে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। মান যাচাইয়ে ব্যর্থ হয়ে সরকারের নিয়োজিত এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এনসিটিবি। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, হ্যাঁ একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মান যাচাইয়ে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিকের বই ও কাগজের মান যাচাইয়ের সরকার নির্ধারিত এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্সিসেস বিডি। চিঠি পাওয়ার পরই আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। আমরা দুই পক্ষেরই বক্তব্য নিচ্ছি। তদন্তের পর অবশ্যই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন যেহেতু নতুন শিক্ষাবর্ষ সামনে তাই নির্দিষ্ট সময়ে নতুন পাঠ্যবই নিশ্চিত করার কাজটাও ভালভাবে করা প্রয়োজন। আমরা সার্বিক বিষয় সতর্ক আছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নিয়োজিত ইন্সপেকশন এজেন্সিকে সহযোগিতা না করায় বই ছাপার কাজে অগ্রগতি নেই। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত এনসিটিবির কর্মকর্তারা। যেসব মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নিয়ম মেনে কাজ করছেন তারাও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বইয়ের প্রচ্ছদের ভেতরের অংশে জাতীয় ব্যক্তিত্বদের ছবি সংযুক্ত ও মানসম্মত বই দেয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা রয়েছে। সেজন্য বইয়ের মান ঠিক রাখতে চলতি বছর ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ (বইয়ের স্থায়িত্ব) ১৪ থেকে ১৬ করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, হঠাৎ কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দু-একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপানোর চেষ্টা করছে। এনসিটিবি ও এজেন্সির কঠোর মনিটরিংয়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এজেন্সিকে নানা ধরনের হুমকিও দিচ্ছে। এতে বইয়ের মান রক্ষা এনসিটিবির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে নিম্নমানের কাগজের কারণে গত ২৬ নবেম্বর অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ১২০ টন কাগজ বাতিল করে মাধ্যমিকের পরিদর্শন এজেন্সি ইনডিপেনডেন্ট। ৬০ জিএসএমের (গ্রাম/স্কয়ার মিটার) পরিবর্তে ৫৫ জিএসএম, বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬ বছরের স্থলে ১৪.৮৮ পাওয়ার পর তা বাতিল করা হয়।
নিয়মানুযায়ী মাধ্যমিকের বইয়ের কাগজের জিএসএম (গ্রাম/স্কয়ার মিটার) ৬০ এবং প্রাথমিকে ৮০ ঠিক রাখতে হবে। সে হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের এসব কাগজ প্রেস থেকে সরিয়ে ফেলার কথা। কিন্তু তারা তা না সরিয়ে ওই ১১০ টন কাগজ ২ ডিসেম্বর আবার মান যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেয়। ইন্সপেকশন এজেন্সি বিভিন্ন রোল থেকে কাগজ সংগ্রহ করার ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেদের মেশিনে পরীক্ষা করে দেখেন এগুলোর জিএসএম ৫৫।
এদিকে এর পরপরই মাধ্যমিকের বই ও কাগজের মান যাচাইয়ে সরকার নির্ধারিত এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্সিসেস বিডির কাজে বাধাদানের অভিযোগ উঠেছে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান বরাবরে দেয়া অভিযোগপত্রে ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্সিসেস বিডির স্বত্বাধিকারী শেখ বেল্লাহ হোসেন পাঠ্যপুস্তকের মান যাচাই কার্যক্রম ও কাগজের নমুনা সংগ্রহে ‘অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস’র বিরুদ্ধে বাধাদানের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
পাঠ্যপুস্তরের মান যাচাইয়ে সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত এ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, ‘অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের আবেদনের প্রেক্ষিতে চুক্তি মোতাবেক আমাদের প্রতিষ্ঠানের ইন্সপেক্টর গত ২ ডিসেম্বর দৈবচয়ণের ভিত্তিতে কাগজের নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি উক্ত প্রেস আমাদের সংগ্রহ করা কাগজের নমুনা পরিবর্তন করে তাদের পছন্দমতো কাগজের নমুনা আমাদের প্রতিনিধিকে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে। এমতাবস্থায় আমাদের সংগ্রহকৃত কাগজের নমুনা না দেয়ায় আমরা কাগজের মান যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হই।’ এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সরকার নির্ধারিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন ও এ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সোমবারও এনসিটিবির দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্সিসেস বিডির স্বত্বাধিকারী শেখ বেল্লাহ হোসেন। তিনি বলেছেন, আমরা চিঠি দিয়েছি। আজও (সোমবার) এ বিষয়ে কথা বলতে এসেছি। দেখা যাক।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে মুদ্রণের অগ্রগতি ও গুণগত মান বজায় রাখতে মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মানসম্মত না হওয়ায় বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা প্রাথমিক স্তরের ৬০ হাজার বই বাতিল করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পাঠানো বই যাচাই-বাছাই করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের যথাযথ মান বজায় রেখে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ এবং যথাসময়ে দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ পর্যালোচনা সভা হয়েছে।