প্যারোলে মুক্তিতে অনীহা খালেদা জিয়ার - দৈনিকশিক্ষা

প্যারোলে মুক্তিতে অনীহা খালেদা জিয়ার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে যে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল তার গতি কমে গেছে। পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির কিছু নেতা যে কোনভাবে মুক্ত করতে চাইলেও খালেদা জিয়া নিজে এবং দলের একটি বড় অংশের প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে অনীহা রয়েছে। প্যারোলে মুক্তি নিলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি নতুন করে বেকায়দায় পড়বে এমন আশঙ্কা রয়েছে তাদের। এ কারণেই, নিজের দোষ স্বীকার করে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদনে স্বাক্ষর করতে চাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল ইসলাম।

সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আইনগতভাবেই তাকে মুক্ত করার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। একদিকে আইনগতভাবে কিভাবে তাকে মুক্তি দেয়া যায় তা উল্লেখ করে দলীয় আইনজীবীদের মাধ্যমে একটি আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে কিভাবে তাকে মুক্ত করা যায় সে চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের সহযোগিতাও নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোন আশ্বাস পায়নি বিএনপি।

আরও পড়ুন: জামিন পেলে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন খালেদা জিয়া

এদিকে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকার এখনও অনমনীয় অবস্থানেই রয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টিকে আইন-আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইলে সকল আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে নিজের স্বাক্ষরে আবেদন করতে হবে। আর এখানেই এখনও আটকে রয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি। কারণ, প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে নিজের দোষ স্বীকার করে আবেদন করতে হবে। আর তা করলে তার সারাজীবনের রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর এ কারণেই পরিবারের সদস্যরা চাইলেও খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির আবেদনে স্বাক্ষর করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে পরিবারের সদস্যরা তাকে এ বিষয়ে নমনীয় করার চেষ্টা করছেন। খালেদা জিয়া রাজি হলে তাকে প্যারোলে মুক্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।

খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আবেদন না করলে এই মুহূর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে জানা গেছে। তবে তার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি হচ্ছে এ বিষয়ে জল্পনা-কল্পনার কোন শেষ নেই। রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও সর্বত্র এখন আলোচনায় আছে খালেদা জিয়া কি তাহলে প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন?

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে এ বছরের শুরুতেই তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে ভেতরে ভেতরে চেষ্টা করলেও নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় আসে ১১ ফেব্রুয়ারি তার বোন সেলিনা ইসলাম জরুরী ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলার পর থেকে। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যে কোনভাবেই হোক তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। ওই দিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করার জন্য খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার একটি আবেদন করেন। এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় জল্পনা- কল্পনা।

খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করার বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি জানান। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও ওবায়দুল কাদের জানান। আর এর পর থেকেই সারাদেশের সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে আলোচনায় স্থান পায় বিষয়টি।

খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি নিয়ে যখন জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান এ বিষয়ে এখনও কোন আবেদন করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে সেটা দেখে আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে। আর আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্যারোল রাজপথে চাইলে হয় না। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত করতে হয়। আমার জানা মতে এখনও কেউ দরখাস্ত করেনি।

রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে দলটি দ্বিমুখী আচরণ করছে। তবে খালেদা জিয়ার প্যারোলের জন্য আবেদন করলে শর্ত বিবেচনায় বিষয়টি ভাবা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি কোন পথে হাঁটছে? আন্দোলন, না কি মানবিক বিবেচনায় প্যারোলে মুক্তি? বিএনপির কোন কোন নেতা বলছেন, আন্দোলন করে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবেন। আবার কেউ বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্যারোলে মুক্তি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের নয়, আদালতের বিষয়। তবে তারা প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করলে বিধিবিধান অনুসারে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

খালেদার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি কূটনীতিকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশীরা আমাদের বন্ধু, তারা আমাদের আইনের বাইরে কোন অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে চাপ দিতে চাইলে মেনে নেব না। প্যারোল নিয়ে পর্দার অন্তরালে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্দার অন্তরালে কিছুই নেই, সবকিছু ওপেন সিক্রেট। কোনটাই সিক্রেসি থাকবে না, সিক্রেসির কালচার নেই। বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর জন্য বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।

প্যারোলে আবেদন বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার

রবিবার দুপুরে গুলশানে সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শাখা উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। এ বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোন আবেদন আসেনি। বিএনপি ও তার পরিবার কোথায় আবেদন করেছে আমার জানা নেই। খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় আদালতের আদেশে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। উনি কোন আবেদন করতে চাইলে আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে।

১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে তার মুক্তির জন্য ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনের পরই এ মাসেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে তোড়জোড় শুরু হয়। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তাদের দলের পক্ষ থেকে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি বলি। ওবায়দুল কাদের এ কথা বলার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি মাসে বিদেশ যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন শুরু হয় সর্বত্র।

বিএনপির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছে। কিন্তু কারাবিধি অনুযায়ী বন্দী হিসেবে তাকে সরকারী হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ক্যাবিনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার দাঁত ও জিহ্বার চিকিৎসা সেখানে ভালভাবে সম্পন্ন হলেও তার ডায়াবেটিসসহ আরও কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর প্রভাবে তিনি যে কোন সময় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এমনকি তার মৃত্যুর আশঙ্কাও করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।

সম্প্রতি বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার তার প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা শুরু করে। বেশ কিছু দেশের কূটনীতিকরাও খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে বিএনপির কিছু নেতা ও পরিবারের সদস্যরা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার পরিবারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাকে বিদেশ প্রেরণের সুপারিশ করার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। এ আবেদনটি মেডিক্যাল বোর্ডে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035400390625