প্রতিমন্ত্রীর ‘স্বাক্ষর’ করা বই কেনার চিঠিটি তাহলে কার - দৈনিকশিক্ষা

প্রতিমন্ত্রীর ‘স্বাক্ষর’ করা বই কেনার চিঠিটি তাহলে কার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নির্দিষ্ট একটি বই কেনার চিঠি দেওয়া হয়েছে দেশের সব জেলা প্রশাসককে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নামের একটি বই সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ‘স্বাক্ষরিত’ এই আধা সরকারি (ডিও) পত্রের নম্বর ৪০৬। চিঠির ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়েছে বিভিন্ন জেলার সহকারী কমিশনার স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় চিঠি। জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বরাবর পাঠানো দ্বিতীয় চিঠির অনুলিপি পেয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শনিবার (১ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তবে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের কার্যালয় থেকে  দাবি করা হয়েছে, এমন কোনো চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী স্বাক্ষর করেননি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী দাবি করেছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নথিতে ৪০৬ নম্বর ডিও পত্রে বই কেনাসংক্রান্ত চিঠি ইস্যু হয়নি। এটি ভুয়া চিঠি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।’

তবে ‘ভুয়া’ চিঠির খবর জেনেও গত দুই সপ্তাহে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বইটি এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার কপির বেশি। যে বইয়ের বাজারমূল্য ৯৬০ টাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তা কিনতে হয়েছে বইয়ের গায়ে দেওয়া মূল্য ১৩০০ টাকাতেই।

বইটি ও এর প্রকাশক
তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বইটির লেখক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান। লেখক হিসেবে যিনি ব্যবহার করতেন ড. আনু মাহ্‌মুদ নামটি। ৭০৪ পৃষ্ঠার এ বইয়ের প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। ৬৫টি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের ৩৬টি লেখা বিশিষ্টজনদের।

এর মধ্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ দুজন লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, বইটি সম্পর্কে কিছুই শোনেননি তাঁরা। লেখা প্রকাশের জন্য কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বইটিতে ভুল তথ্যের সঙ্গে আছে অসংখ্য বানান ভুলও। ভূমিকার প্রথম দুই পৃষ্ঠার ৬০০ শব্দের মধ্যে অন্তত ২২টি বানান ভুল রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা বইয়ের এমন অযত্নে প্রকাশ ও বিপণন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ কে এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষমতাবান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে অনেক সময় প্রকাশক বই করতে বাধ্য হন। বইটির বিপণনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাম্রলিপির চুক্তি হয়।

সে অনুযায়ী প্রায় ৪৫ শতাংশ কমিশনে একবারে মূল্য দিয়ে বই কিনেছে এস বি কমিউনিকেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি। তারাই বিপণনের ব্যবস্থা নিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি ইস্যুর সঙ্গে প্রকাশনীর কোনো সম্পর্ক নেই।’

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা কথিত ‌ভুয়া চিঠিটির অনুলিপিতেও উল্লেখ আছে এস বি কমিউনিকেশনের নাম।

প্রতিমন্ত্রীর চিঠি ও মাঠপর্যায়ের তথ্য
প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ‘স্বাক্ষর’সংবলিত চিঠির তারিখ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুলাই জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বই কেনার অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী কমিশনার। ১৪ জুন চিঠি দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সহকারী কমিশনার।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, ভুয়া চিঠি সন্দেহ হয়নি বলেই দ্বিতীয় চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তবে কাউকে কিনতে বাধ্য করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, বছরজুড়েই এমন বইয়ের তালিকা আসতে থাকে। কখনো কখনো তহবিল পর্যন্ত থাকে না, কিন্তু বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানের অন্য তহবিল থেকে বই কিনতে হয়।

প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরসংবলিত বই কেনার চিঠি প্রসঙ্গে জানতে দেশের ১০টি জেলার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ থেকে পাওয়া গেছে চিঠিটি। দুটি জেলা থেকে প্রাপ্তির কথা মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও চিঠিটি দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। কোনো কোনো জেলা প্রশাসক অবশ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পাননি বলে জানিয়েছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি বই কেনার নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্যরা দিতে পারে না। তবে অনুরোধপত্র যায় অনেক সময়। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিবেচনা করতে হবে, বইটি আদৌ তাদের প্রয়োজন আছে কি না।

প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘এক দিন সময় দেন’
বইটি বিপণনের দায়িত্বে থাকা এস বি কমিউনিকেশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেরিয়ে আসে আরেক তথ্য। তাঁর দেওয়া সূত্র থেকে যোগাযোগ করা হয় ময়মনসিংহের আবু সালেহ মো. মুসা নামের স্থানীয় একজন সাংবাদিকের সঙ্গে। আবু সালেহ বলেন, ‘বইটি প্রধানমন্ত্রীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে লেখা দেখে উৎসাহিত হই।

বই বিক্রির সঙ্গে যুক্ত যুবকেরা কিছু টাকা পাবে, এটা ভেবে তাদের অনুরোধে প্রতিমন্ত্রীর কাছে যাই। তাঁর ময়মনসিংহের পণ্ডিতপাড়ার বাসায় গিয়ে অনুরোধ করি ডিও করে দিতে। প্রতিমন্ত্রী আমাকে তাঁর সহকারী একান্ত সচিব হাবিবুর রহমানের কাছে চিঠি রেখে আসতে বলেন। পরে স্বাক্ষর করা চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ডিও নম্বর মন্ত্রণালয় থেকেই পাঠানো হয়েছে।’

আবু সালেহ মো. মুসার এই বক্তব্যের পর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবারও যোগাযোগ করা হলে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা পুনরায় দাবি করেন, এটি ভুয়া চিঠি।

এর মধ্যে একটি সূত্র জানিয়েছে, বইটির বিক্রি আপাতত বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।

প্রতিমন্ত্রী গত ১৫ সেপ্টেম্বর একবার মাত্র ফোন ধরেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক দিন সময় দেন। আমি ব্যাপারটি দেখছি।’ এরপর আর প্রতিমন্ত্রী ফোন ধরেননি। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁর মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

পুরো বিষয়টি জানিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক ও প্রকাশক মফিদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রন্থজগতে এবং গ্রন্থের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা দায়বদ্ধ, এই বৃত্ত মিলে একটি যথেচ্ছাচার চালাচ্ছে। এই অনাচারে ক্ষমতাবান অনেকেই সংশ্লিষ্ট, ক্ষমতাহীনেরাও সুবিধা পেতে একে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা জাতি।’

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030598640441895