শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির বিষয়ে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নন জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বুধবার রাত আটটার দিকে দৈনিকশিক্ষার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন কি-না? জবাবে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার খবর আমরা পড়লাম ও দেখলাম, সুনির্দিষ্ট করে আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দাবি মানার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।’
আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠনগুলোর জোটের মুখপাত্র মো: নজরুল ইসলাম রনি দৈনিকশিক্ষাকে জানান, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তৃতার খবর দৈনিকশিক্ষায় দেখা ও শোনার পর নেতৃবৃন্দ একটি জরুরী সভায় মিলিত হয়েছিলামন সেখানে অনশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার রাত দশটার দিকে দৈনিকশিক্ষার অপর এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল খালেক নামে ফেসবুক ভিত্তিক একটি শিক্ষক সংগঠনের নেতা টেলিফোনে বলেন, ‘অনশন চলবে।প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সুষ্পষ্ট নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখন বাড়ীতে, ডিনার করে শুয়ে পড়বো, ফজরের সময় প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছে যাবো।’
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে দেখা যায় শ’খানেক শিক্ষক পলিথিন ও কম্বলের নীচে শুয়ে রয়েছেন। তাদের শরীরের ওপর রাখা প্লাকার্ডে লেখা ‘মরতে হয় মরব তবু জাতীয়করণ নিয়ে বাড়ী ফিরবো’। জিএম শাওন নামের একজনকে দেখা যায় সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করতে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণ সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নীতিমালার ভিত্তিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, স্কুল সরকারিকরণ ও এমপিওভুক্তি নীতিমালার ভিত্তিতেই হবে। কোন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী কত, পাওয়ার যোগ্য কি না দেখতে হবে।আমরা আশ্বস্ত করেছি, নিশ্চয়ই আমরা বিবেচনা করব, পরবর্তী বাজেট যখন আসবে তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারের শরিক তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে যে স্কুলের প্রস্তাব নিয়ে আসলো সেই স্কুলে মাত্র দেড়শ ছাত্র-ছাত্রী, মাত্র দেড়শ! সেখানে সরকারিকরণ করবার প্রস্তাব নিয়ে আসছে আমারই আত্মীয়। আমি বলে দিলাম যেখানে মাত্র দেড়শ ছাত্র-ছাত্রী, এটা কীভাবে সরকারিকরণ করব? আত্মীয় হলেই তো এসে… বললেই তো আমি করতে পারবো না। আমি ওখানে নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলাম। একটা যৌক্তিকতা থাকতে হবে তো। আমার আত্মীয় হয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসলো আর আমি সেটা দেখেই সরকারি করে দেবো, এত বড় অন্যায় তো আমি করব না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা প্রায় ৩৬ হাজার স্কুল সরকারিকরণ করেছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তখন আমরা ২৬ হাজার স্কুল সরকারি করে দিয়েছি। তখন কিন্তু একটা কথা ছিল, আর কোনো স্কুল সরকারিকরণের জন্য দাবি করা যাবে না, এমপিওভুক্ত করলেই হবে। এরপর বেশকিছু স্কুল এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি।
গত ১০ থেকে ১৪ই জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা পাঁচদিন অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিরা। এরপর সোমবার (১৫ই জানুয়ারি) থেকে আমরণ অনুশন শুরু করেন তারা। বৃহস্পতিবার আমরণ অনশনের ছিল চতুর্থ দিন। জাতীয়করণের এক দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে এ পর্যন্ত ৬টি শিক্ষক সংগঠন একজোট হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে যাবেন না বলেও জানান তারা।