চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অবৈধভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এনামুল হক। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকও হয়েছেন তিনি। বর্তমানে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষিকার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছিলেন এনামুল। ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভালোই চলছিল এনামুল হকের দিন।
হঠাৎ রাগের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরে বসেন অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। এ থাপ্পড়ের পরই তার সব গোমর ফাঁস হয়ে যায়।
জানা গেছে, ওই প্রভাষক সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত হয়। তদন্তে এনামুল হেকে অবৈধ নিয়োগের বিষয়টি বেড়িয়ে আসে। অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক এনামুলকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। অবৈধ নিয়োগ নিয়ে এমপিও বাবদ নেয়া টাকা ফেরত দিতে হবে এনামুল হককে। প্রাথমিকভাবে তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রভাষক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত সম্পাদন করেছে কুমিল্লা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। গত ৬ আগস্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তারা।
তদন্তে প্রধান শিক্ষক এনমুল হকের বিরুদ্ধে আসা অবৈধ নিয়োগ ও প্রভাষককে থাপ্পড় দেয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. এনামুল হক যোগ্যতা ও কাম্য অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের সময় এনামুল হকের কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিলনা। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকের প্রাপ্ত বেতন ভাতা ফেরত যোগ্য বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেহেতু তার সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ অবৈধ, তাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে তার দায়িত্ব পালন বিধিসম্মত নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, এনামুল হক একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরেছেন বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সাথে এনামুল অনৈতিক সম্পর্ক গড়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন এনামুল। সে টাকাও ফেরতযোগ্য। আর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং বিদ্যমান।
শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে তাকে শোকজ করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর শোকজ নোটিশ এনামুল হককে পাঠানো হয়।
নোটিশে প্রভাষককে থাপ্পড় মারা, কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ এবং ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। নোটিশের জবাব শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে এনমুল হককে।
অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানায়, অবৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের এমপিও বন্ধসহ তাকে এমপিও বাবদ তোলা সব টাকা ফেরত দিতে বলা হতে পারে। বিধি মতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে এনামুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।