প্রযুক্তির অপব্যবহার চারদিকে নামাচ্ছে গাঢ় অন্ধকার - দৈনিকশিক্ষা

প্রযুক্তির অপব্যবহার চারদিকে নামাচ্ছে গাঢ় অন্ধকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

খুব দ্রুতই কিছু অন্ধকারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়ে গেল। এই দুর্ভাগ্যজনক অন্ধকারের নানা নাম রয়েছে। কিশোর গ্যাং, টিকটক, লাইকি ইত্যাদি। আরো কী কী ভয়ংকর উপাদান যুক্ত হওয়া বাকি আছে কে জানে। এখন অনেক অভিভাবকই কৈশোরে পা দেওয়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অজানা আশঙ্কায় দিন কাটান। কী জানি কখন বখে যায় তাঁদের সন্তান। এমনই দুর্ভাগ্য আমাদের বরণ করতে হচ্ছে যে প্রযুক্তির অপব্যবহার চারদিকে নামাচ্ছে গাঢ় অন্ধকার। যে কিশোর স্বপ্ন দেখবে সুন্দর পৃথিবীর। স্বপ্ন দেখবে সুন্দর পৃথিবীর নায়ক হওয়ার। অথচ এদের অনেকে কৈশোরে পা দিয়ে দেখতে পায় চারদিকে এঁদোকাদা। নানা রকম অনাচারের পৃথিবী। সে ভুলে যায় সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন। তাকে হাতছানি দেয় ভয়ংকর কল্পজগৎ। তলিয়ে যেতে থাকে দুর্গন্ধময় পচা ডোবায়। কিন্তু এসব কিশোরকে তলিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, একেকটি অপরাধের প্রকৃতি ও প্রণোদনা আলাদা। খুব বেড়ে যাচ্ছে টিকটক-লাইকির আসক্তি। এমনিতেই আমাদের পারিবারিক শিক্ষায় শাসনের বাঁধন ঢিলে হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবকের নানাভাবে আর্থিক সামর্থ্য বেড়েছে। সময়ের আগেই কিশোর ছেলে-মেয়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্মার্টফোন। এর মধ্যে অনেকের আভিজাত্য রক্ষা ও অসম প্রতিযোগিতার ব্যাপারও থাকছে। এই বাস্তবতায় অনেক কিশোর-কিশোরী নানা জাতের ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব কিশোরমনকে অপরাধপ্রবণ করে তুলছে। কৈশোরেই যৌবনের জৈবিক উত্তেজনা অনুভব করছে। আর তাই প্রায়ই কিশোর ধর্ষকদের কথা উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। পারিবারিক বাঁধন দুর্বল হওয়ায় টিকটক, লাইকির কল্যাণে অন্ধকারের পথে হাঁটা শুরু করে কিশোর গ্রুপ। নিদারুণ কৌতূহল থেকে তারা অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যতই জিরো টলারেন্সের ভাঙা রেকর্ড বাজাক না কেন, হাত বাড়ালেই মাদক পেয়ে যাচ্ছে কিশোর। আমার মনে পড়ে, ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন পকেটমানি হিসেবে চার আনা সব সময় পাওয়া যেত না। যদিও বা পাওয়া যেত তা দিয়ে আচার বা আইসক্রিমের বেশি খাওয়া যেত না। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব মাইলের মতো। রিকশা চলাচল করত। সামর্থ্য থাকলেও অভিভাবক শিক্ষা দিতেন হেঁটে যাওয়া-আসা করতে। এখন সময় পাল্টেছে, নানা সংকটও বেড়েছে। কিন্তু ২০ টাকার বদলে যদি ২০০ টাকা পকেটমানি ছোট্ট ছেলে-মেয়েটির হাতে চলে আসে তখন নানা অশুভ হাতছানিতে সে সাড়া দিতেই পারে।

কয়েক দিন আগে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখলাম। কোনো এক গ্রুপ সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে ভিডিও করে মানুষকে সচেতন করতে চায়। তেমনি এক অসংগতির চিত্র ধারণ করেছে তারা। ঢাকার এক নিরিবিলি রাস্তায় একটি সুশ্রী এবং পোশাকে অভিজাত কিশোরীকে ঘিরে ধরেছিল তিনটি ছেলে। মেয়েটির হাত ধরে এবং পোশাক ধরে টানাটানি করছে। একজন আবার তার স্মার্টফোনে এই দৃশের ভিডিও করছে। সমাজসচেতক ভিডিও টিম তাদের কাছে পৌঁছে যায়। এতে কিশোর-কিশোরীরা বিরক্ত হয়ে গেল। তারা নাকি টিকটক ভিডিও তৈরি করছে। আমি সামাজিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলাম। দেখে ও কথা শুনে মনে হলো মেয়েটি শিক্ষিত পরিবারের। ছেলেগুলো একটু বখাটে ধরনের। যে ভিডিও করছিল তার বাবা ব্যবসা করেন। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর বয়স নয়, তবু ছেলের বাবা ছেলেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ফোন কিনে দিয়েছেন। এতে নাকি ভিডিও ধারণ ভালো হয়। মেয়েটিকে প্রশ্ন করা হলো, তুমি যে তিনটি ছেলের সঙ্গে উত্তরা থেকে এত দূরে চলে এসেছ, তোমার পরিবার কি জানে? মেয়েটি না সূচক জবাব দিল। আমার মনে হলো যতই তথাকথিত আধুনিক হই, পরিবারগুলোর এতটুকু খবরদারি থাকা দরকার যে তার কিশোর ছেলে বা মেয়েটি কখন কোথায় সময় কাটাচ্ছে। কারণ এই বয়সে এখনই অতটা ভালো-মন্দ বোঝার পরিপক্বতা আসার কথা নয়। কিন্তু তেমন দায়িত্ব পালন না করে আমরা অভিভাবকরা অন্ধকারে হাঁটার পথ খুলে দিচ্ছি। অনেক টিকটক নাকি পর্নো ভিডিও প্রচার করছে। মাদকের আর হিংস্রতার পথে উসকে দিচ্ছে। প্রযুক্তির এমন অপব্যবহার রুখবে কে!

আরেকটি ভয়ংকর উপাদান এরই মধ্যে সমাজে শক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এর প্রাতিষ্ঠানিক নাম হয়ে গেছে কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন নামে পরিচিত কিশোরদের হিংস্র গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে। সশস্ত্র এই কিশোররা কখনো ছিনতাইকারী, মাদকাসক্ত, কখনো দখলবাজ, কখনো ধর্ষক, কখনো খুনি হিসেবে পরিচিত করিয়েছে নিজেদের। কিশোর গ্যাংয়ে শিক্ষিত ধনী পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে বস্তির বাউণ্ডুলে ছেলে—সবাই যুক্ত হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক এলাকার মাস্তান বড় ভাইয়েরা, যাঁরা প্রায়ই ক্ষমতাসীন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এভাবে একটি রাজনৈতিক প্রশ্রয় থাকে কিশোর গ্যাংয়ের মাথার ওপর। আমাদের সমাজ, পরিবার ও রাজনীতি যদি সুস্থ ধারার জীবনপ্রত্যাশী হতো, তাহলে এভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ নেমে আসত না। দুর্যোগ যদি এসেই পড়ে, তাহলে তা থেকে সমাজকে রক্ষা করার দায়িত্ব বর্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পক্ষ কি সে দায়িত্ব পালন করতে পারছে?

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

টিকটক, লাইকি যে সমাজে অসুস্থতা ছড়াচ্ছে তা তো সংবাদমাধ্যম অনেক দিন থেকে জানাচ্ছিল। এ ধরনের প্রযুক্তির মাদকে সমাজ যখন ডুবতে বসেছে তখন র‌্যাবের ডিজি টিকটক, লাইকি বন্ধের আবেদন জানাচ্ছেন। আমাদের দেশের প্রশাসন বরাবরই এমন যে অঙ্কুরে বিষাক্ত ধুতুরার বীজ উপড়ে ফেলে না। বিষ প্রয়োগে মানুষের জীবন নাশ হলে তারপর নড়েচড়ে বসে। ততক্ষণে মূলটি মাটির অনেক গভীরে ঢুকে যায়। সমুদয় উপড়ে ফেলাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমার মনে একটি প্রশ্ন সব সময় ঘুরপাক খায়। অল্প কয়েক বছর ধরে আমরা কিশোর গ্যাংয়ের নাম শুনছি। এরা গোপন দল নয়। প্রকাশ্যে অনাচার করে বেড়াচ্ছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এত শক্তিশালী হওয়ার পরও এবং তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার এত শাখা থাকার পরও কিশোর গ্যাং তৈরি হতে পারল কেমন করে? শুরুতে মূলোৎপাটন কি খুব কঠিন ছিল? নাকি বরাবরের মতো ক্ষমতার রাজনীতির কাছে অসহায়ত্ব বরণ করতে হয়েছে। যেহেতু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের লাঠিয়াল কিশোর গ্যাং। এদের দিয়ে দখলদারি বজায় রাখা আর বিরোধী পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়, তাই হয়তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিশ্চুপ থাকা ছাড়া উপায় নেই।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, আমাদের দেশের প্রশিক্ষিত পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনী চাইলে এক মাসের অভিযানে কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে এ ধরনের সামাজিক ব্যাধির মূলোচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু কখনো সততার অভাবে, কখনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকার কারণে তাদের পক্ষে রাষ্ট্র ও সমাজ রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। মাঝেমধ্যে দু-একটা অভিযানে সন্ত্রাসী কিশোরদের দু-চার-দশজন আটক হয় ঠিকই, তবে তা আইওয়াশ হিসেবেই মানুষ মনে করে। কারণ যখন ভুক্তভোগী মানুষ দেখে কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিপালক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তখন আস্থা রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

বাস্তবতা বিচার করলে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দোষারোপ করে লাভ নেই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে অনেক সময় অনেক কিছু তাদের করার থাকে না। তাই বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনীতি প্রজন্মকে আলোর পথে আনতে চায় কি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেধা, শ্রম ও প্রজ্ঞায় অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সমাজ বিপন্ন হলে উন্নয়নের ফললাভে দেশবাসী কিন্তু স্বস্তিতে থাকবে না। আন্তর্জাতিক মহলেও একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকে যাবে।

সরকারের ভেতর থেকেই কিন্তু সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ করা হচ্ছে। সেদিন সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যরা বিদেশে টাকা পাচারের প্রশ্ন তুললে অর্থমন্ত্রী জানালেন, তাঁর কাছে এমন কোনো তালিকা নেই। তাঁরা যদি তালিকা দেন তো ব্যবস্থা নেবেন। আমি জানি না এটি সাংসদীয় রসিকতা ছিল কি না। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। অর্থপাচারের কথা তো সর্বজনবিদিত। এদের তালিকা তৈরি করার কথা প্রশাসনের ও গোয়েন্দাদের। এভাবে সবাইকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করা তো ঠিক না। এখন একই সুরে যদি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলে টিকটকের অবৈধ ব্যবহার যারা করে এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কারা সেই তালিকা সাধারণ মানুষ পুলিশকে দিলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তাহলে বিষয়টি হাস্যকর হয়ে যাবে না? তবে আমাদের বিশ্বাস, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তেমন কথা বলবে না।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় বাধ্য হয়ে সাফল্য দেখাতে পারছে না আমাদের চৌকস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে যদি সবুজ সংকেত থাকত, যদি রাজনৈতিক বিধায়করা স্থিতিশীল সমাজ গঠনে ঐকমত্যে আসতে পারতেন, যদি পারিবারিক বন্ধন আরো শক্ত হতো, অভিভাবকরা সন্তানের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারতেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যদি পারত প্রভাবমুক্ত হয়ে ও সততার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে, তাহলে সব সংকটের প্রতিবিধান করা সহজ হতো।

 

লেখক : এ কে এম শাহনাওয়াজ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030720233917236