প্রসঙ্গ ক্লাসের অনগ্রসর শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ ক্লাসের অনগ্রসর শিক্ষার্থী

মো. দেলোয়ার হোসেন |

সম্প্রতি হঠাৎ করেই একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাই। ক্লাস চলছিল। তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি রিডিং প্রথম বেঞ্চিতে বসা ছাত্রীটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে পারলো। কিন্তু থার্ড বেঞ্চে বসা ছাত্রীটি একদম পারলো না। অন্য শ্রেণিতে কবিতাটি মুখস্থ পারলেও যখন বই দেখে পড়তে বললাম তখন পারলো না। এই শিক্ষার্থীরা এই দুর্বলতা নিয়ে উপরের শ্রেণিতে উঠে যাবে। এ ভাবেই চলছে। আবার সমাপনী পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষার্থীরা এ+পেয়েছে। স্কুল-উপজেলায় জিপিএ এ+ অধিক সংখ্যক দেখে খুশিতে আটখানা। আমি যখন অধিদপ্তরে সমাপনী পরীক্ষার গুরু দায়িত্ব পালনে যুক্ত ছিলাম, তখন আমিও ৯৮ শতাংশ পাসের হারে কম খুশী হইনি! তবে এটাও দেখেছি, মাঠপর্যায়ের অনেকে ফলাফল মোটাতাজাকরণে বহুবিধ কৌশলের আশ্রয় নিতে কার্পণ্য করেননি।

যাই হোক, কাউকে দোষারোপ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। এই যে থার্ড বেঞ্চ থেকে শুরু করে যত পেছনের বেঞ্চে যাবেন-ততই এই চিত্র আরও ভয়াবহ! আমরাই এদেরকে 'পিছনে পড়া' বা 'অনগ্রসর' বা ক্ষেত্র বিশেষে 'স্লো লার্নার' প্রলেপ দিতেও কুন্ঠাবোধ করি না। যদিও এর পেছনে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, পারিবারিক ইত্যাদি কারণ থাকলেও বিদ্যালয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা যে পিছিয়ে পড়ছে তা অস্বীকার করা যাবে না। এই নিবন্ধে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে লেখাটা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। পিছিয়ে পড়া শিশু বলতে তাদের বুঝায়, যারা তাদের সমবয়সী বা নিজ গ্রেডের অন্যান্য শিশুদের চেয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। স্কুলে, এ ধরনের শিশুরা একই ক্লাসে একাধিক বছর থেকেও পড়াশোনায় তেমন অগ্রসর হতে পারে না। এমনকি অনেকে ওপরের শ্রেণিতে উত্তরণেও ব্যর্থ হয়। এই পশ্চাৎপদতা শারীরিক বা মানসিক দুর্বলতা ছাড়াও নানাবিধ পারিবারিক-সামাজিক কারণও নিহিত রয়েছে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের ‘অমনোযোগী শিশু’ বা ‘ধীরগতির শিক্ষার্থী’ নামেও ডাকা হয়। এই শিশুরা তার ক্লাসের একই বয়সের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না অর্থাৎ এই শিশুদের  যা করা উচিত, তা অর্জন করতে সক্ষম হয় না এবং তার স্বাভাবিক সক্ষমতার চেয়ে পিছিয়ে থাকে।

পিছিয়ে পড়া শিশুদের বৈশিষ্ট্য: কম বুদ্ধিমত্তা, মানসিক বা বিভিন্ন জটিলতা, নির্ভরশীল আচরণ, ধীরগতির শিক্ষার্থী, অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড, ধীরগতির বৃদ্ধি এবং বিকাশ, হতাশায় আচ্ছন্ন,একাকিত্ব থাকতে পছন্দ, সামাজিকতা এড়িয়ে চলার প্রবণতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অভাব, ক্রমাগত ব্যর্থতা ইত্যাদি নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়।


কোনো শিশু তার সমবয়সী অন্য পাঁচটা শিশুর মতো তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যে হারে উন্নতি করতে পারে, সেই হারে উন্নতি করতে পারে না বলে তাকে অনগ্রসর শিশু বলা যেতে পারে। তারা স্কুলে লেখাপড়ার অগ্রগতিতে স্বাভাবিকভাবে তা প্রদর্শনে অক্ষমতা দেখায়। তারা তাদের পড়াশোনায় দুর্বল এবং কম একাডেমিক কৃতিত্ব দেখায়। পিছিয়ে পড়া শিশুরা তার গ্রেড অনুযায়ী কাজ করতে পারে না বা সে তার গ্রেডের অন্যদের চেয়ে অর্জনে পেছনে। পিছিয়ে পড়া শিশুদেরকে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ সংজ্ঞায়িত করেছেন। বার্টনহলের মতে, ‘সাধারণভাবে পশ্চাৎপদতা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে তাদের শিক্ষাগত কৃতিত্ব তাদের স্বাভাবিক ক্ষমতার স্তরের নিচে পড়ে। অনগ্রসর শিশু  বিদ্যালয়ের তার বয়সের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে নিচের ক্লাসের কাজ করতে অক্ষম।’  ‘অনগ্রসর ছাত্র সে যে তার ক্রমপুঞ্জিত বয়সের অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে তুলনা করে, চিহ্নিত শিক্ষাগত ঘাটতি দেখা যায়’-স্কোনেল। 

 পিছিয়ে পড়া শিশুদের তাদের শেখার অবস্থা দেখেই চিহ্নিত করা যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষে তাদের শিখন কৃতিত্বই অন্য সহপাঠীদের থেকে পৃথক করে ফেলে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক বা একাডেমিক স্কোরের ভিত্তিতেও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বার্টের মতে, পিছিয়ে পড়া শিশু হলো, সেই যার শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক ৮৫-এর নিচে। শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক  হলো, শিক্ষার্থীর জ্ঞান তার বয়স অনুযায়ী কিনা। শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক সূত্র হল:E.Q.=E.A./C.A.x-১০০ যেখানে,E.Q.=শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক E.A.=শিক্ষাগত বয়সC.A.=ক্রমপুঞ্জিত বয়স।উদাহরণ:একটি শিশুর ক্রমপুঞ্জিত  বয়স, ১২ বছর। গণিতে তার মানসিক বয়স ১০ বছরের সমান এবং পড়াশোনায় তার বয়স ৮ বছর বয়সের শিশুর সমান। গণিতে শিশুর গড় বয়স (বা E.A.) হবে ৯ বছর,E.A=(১০+৮)/২=৯ তাই, E.Q=E.A/C.A x ১০০। E.Q = ৯/১২ x ১০০=৭৫ অর্থাৎ সেই শিশুর শিক্ষাগত বুদ্ধাঙ্ক ৭৫। সে পিছিয়ে পড়া শিশুদের ক্যাটাগরিতে আসবে।
সাধারণত দুই ধরনের পশ্চাৎপদতা দেখা যায়: সাধারণ পশ্চাৎপদতা: যেখানে একজন শিশু  সমগ্র ক্ষেত্রে বা সমস্ত বিষয়ে অনগ্রসর। নির্দিষ্ট পশ্চাৎপদতা যখন একজন শিশু  শুধুমাত্র একটি বা দুটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পিছিয়ে পড়ে, তবে সে সমস্ত বিষয়ে পিছিয়ে থাকে না।

লেখক : সাবেক উপ-পরিচালক,প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

 

 

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা - dainik shiksha তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! - dainik shiksha কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন - dainik shiksha ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030698776245117