প্রসঙ্গ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে সৎ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে সৎ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে থাকে। একটি গুণগত ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষা বিভাগের আধিকারিক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গভর্নিং বোর্ডের সদস্য-সদস্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাজ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা। বুধবার (২৮ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন ড. ফোরকান উদ্দিন আহমদ।

কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ গভর্নিং বডি কি সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে? বা করতে পারছে? এছাড়াও কলেজ পর্যায়ে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, এদের পদোন্নতির সুপারিশ করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা, প্রশিক্ষণে পাঠানো, শিক্ষা ও দীর্ঘ চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর করা, কলেজের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসা ও ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলাসহ কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রাখা ও যথাসময়ে যথাযথ ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গভর্নিং বডির অন্যতম দায়িত্ব।

শিক্ষার মান উন্নয়ন তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গভর্নিং বডির সদস্যরা নির্বাচিত হলেও রাজনীতির অপচ্ছায়া সব কিছুকেই এলোমেলো করে দেয়। ফলে ভেস্তে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব পরিকল্পনা-গভর্নিং বডির মুখ্য কাজ। মুখ্য হয়ে উঠে গৌণ কাজ। প্রাধান্য পায় ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ। উপেক্ষিত অভিভাবক ও সচেতন জনগণের মতামত এবং পরামর্শ। চরমভাবে অগ্রাহ্য হয় বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা।

এতে কলেজে বিশৃংখলা অবস্থা চলতে থাকে। প্রকাশ্য রূপ পায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় শিক্ষক গ্রুপ। ক্ষমতার ও নৈতিকতার লড়াই চলে। দলীয় ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সময়-সুযোগমতো মারণাস্ত্র প্রয়োগ করেন। নিরপেক্ষ শিক্ষকরা উভয় গ্রুপের দ্বারাই হেনস্থা হন। দলীয় সভাপতি, দলীয় অধ্যক্ষ এবং দলীয় সদস্যদের আশীর্বাদে দলীয় শিক্ষকদের অনেকে কলেজে যাওয়াই প্রায় ছেড়ে দেন। কালেভদ্রে গেলেও শ্রেণী পাঠদান থেকে বিরত থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যস্ত থাকেন। বিবেকবান শিক্ষকরা বিক্ষুব্ধ মন আর এক সাগর কষ্ট নিয়ে ক্লাসে যান, ভালোভাবে পড়াতে পারেন না। দিন যায়, মাস যায়। হতাশার অক্টোপাস আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে তাদের।

দলীয় শিক্ষকদের কেউ কেউ শুধু গলাবাজি করে সারা বছর বেতন তোলেন, পদোন্নতি পান আর একদিন ক্লাসে না গেলে দলীয় বলয়ের বাইরের শিক্ষকদের শোকজ খেতে হয়। অপমানিত হতে হয়, লঘু পাপে গুরু দ- পেতে হয়। তবুও কলেজে যেতে হয়, ক্লাসে যেতে হয়, কিন্তু পড়াশোনা হয় না। এতে সর্বনাশ হয় নিরীহ শিক্ষার্থীদের। নীরব ধ্বংসযজ্ঞ চলে জাতির। শিক্ষা নিয়ে কত হৈচৈ। শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন নিয়ে আমাদের আত্মতৃপ্তির কমতি নেই।

অবশ্য আমাদের অর্জনও এতে কম নয়। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ কলেজের পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অসঙ্গতি চলছে তা দূর করা গেলে আমাদের অর্জন হতো আরও বেশি এবং মানসম্পন্ন। সংখ্যা দিয়ে বিচার না করে মান দিয়ে বিচার করাটাই শ্রেয়। আর শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ধরে রাখার দায়িত্ব কলেজ পরিচালনা পরিষদের। পাবলিক পরীক্ষার কৃতিত্বের দাবিদার গভর্নিং বডি হলেও বিপর্যয়ের দায় কখনো এর উপরে বর্তাতে দেখা যায় না। শিক্ষার মান নিয়ে আপস করা হবে চরম আহাম্মকি। বরং আরও অনেক আগে মানের ব্যাপারে সচেতন হলে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন অনেকটাই সফল হতো। এখনো সময় আছে।

একমাত্র সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনকারী গভর্নিং বডিই পারে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে। বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবিদদের প্যানেল প্রস্তুত করতে পারে। সেখান থেকে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। গভর্নিং বডির সম্মানিত সভাপতিরা ও সদস্যরা বর্তমানে কোন সম্মানি ভাতা পান না। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সম্মানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে তা থেকে ভালো ফলই পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে টাকার সমস্যার কথা আসতে পারে। কিন্তু তা ঠিক নয়। দেশে টাকার কোন অভাব নেই এবং টাকার অপ্রয়োজনীয় খরচও কম হচ্ছে না। কাজেই উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী দেশের সিংহভাগ কলেজের পরিচালনা পরিষদ নিয়ে ভাবটা জরুরি। শিক্ষা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা ও রাজনীতি একসঙ্গে চলতে পারে না।

অনেক সময় কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার কারণে পরিবর্তিত হয়। তাছাড়া এলাকার কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠি প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও শিক্ষা প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তার করে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি জটিল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত যেমন-প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব মূলত দুই প্রকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্ব। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতদ্বৈততা অথবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব অনেক সময় প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিপত্তি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দেয়ার ফলেই এরূপ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি দুটি বা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত থাকতে দেখা যায়। এর ফলে দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে প্রশাসনের অনেক কার্যক্রমই গতিশীলতা পায় না। কখনও কখনও দ্বন্দ্ব মারাত্মক রূপ নিলে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক বনাম কমিটির দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কাজে কমিটির অবৈধ হস্তক্ষেপের ফলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরূপ সমস্যা দেখা দেয়। কখনও কখনও প্রধান শিক্ষকের অযোগ্যতা বা অদক্ষতার কারণেও এরূপ ঘটে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস আজকাল আমাদের শিক্ষা প্রশাসনে একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল কাজ- লেখাপড়া ফেলে ছাত্র রাজনীতির ছত্রছায়ায় নানা প্রকার সন্ত্রাসে লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পরীক্ষায় নকল প্রবণতা শিক্ষার কাক্সিক্ষত মান নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা মহামারী রূপ ধারণ করেছিল। গত দু’বছর যাবৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগের ফলে এ প্রবণতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পরীক্ষায় নকল প্রবণতা অনেক কমে যাবে। আমাদের সমাজে শিক্ষকদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। শিক্ষকতা পেশাকে একটি নিম্ন মানের পেশা হিসেবে দেখা হয়। ফলে শিক্ষকদের মাঝে একটি হীনমন্যতার ভাব কাজ করে যা তার প্রাত্যহিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। যে কোন কাজ সফল ও সার্থকভাবে করতে হলে সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা একান্ত প্রয়োজন।

কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রশাসনে সর্বস্তরে দায়িত্বশীল সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীর বড়ই অভাব। এ অভাব পূরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে প্রশাসনিক গতিশীলতা আশা করা যায় না। সর্বোপরি সফলভাবে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষকের দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা অত্যাবশ্যক। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে উপযুক্ত ও দক্ষ প্রশাসক না থাকায় বিদালয়গুলোর সার্বিক মান উন্নত হচ্ছে না। নানাবিধ সমস্যা ও গোষ্ঠীর প্রভাবে বিদ্যালয় কার্যক্রমে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে ম্যানেজিং কমিটির অবৈধ প্রভাব ও তদবির এবং পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিষ্ঠানগুলিতে একটি নিয়মিত অনিয়মে পর্যবসিত হয়েছে।

কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নমূলক বা যে কোন কর্মকান্ডে ম্যানেজিং ও গভর্নিং সদস্যরা আর্থিক সুবিধা নেওয়ার পাঁয়তারা করে থাকে। এমনকি তারা শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও বিভিন্ন কারণে হুমকিও প্রদান করে থাকে। এছাড়া ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা যেমন-বিয়ের অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক সভা-সমিতির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটিয়ে থাকে। এমনকি পরীক্ষার সময় অবৈধভাবে ছাত্রদের নকলের সহায়তা করে থাকে। আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চাসহ বিভিন্ন দিবস পালনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন নেই বললেই চলে।

গভর্নিং বডির নির্বাচনকালে কলেজ এলাকায় রীতিমতো জাতীয় নির্বাচনের আমেজ পড়ে যায়। প্রতিষ্ঠাতা, দাতা, অভিভাবক, হিতৈষী, বিদ্যোৎসাহী, বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষক ক্যাটাগরিতে গভর্নিং বডির সদস্য নির্বাচিত হন। দেয়ালে দেয়ালে নানা রঙের পোস্টার সাঁটানো হয় এমনকি গভর্নিং বডির নির্বাচনে কখনো কখনো মাইকিংও করা হয়। দলীয় কোরাম তৈরির জন্য অনেকেই আদা-জল খেয়ে লেগে পড়েন। উদ্দেশ্য, যে কোন মূল্যে গভর্নিং বডির সদস্য হওয়া। এলাকার শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য চেষ্টা করা। অনেকের মতেই গভর্নিং বডির সদস্য হওয়ার মাধ্যমে নিজের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির ও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চিন্তাটাও পরোক্ষভাবে কাজ করে। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তব কিছু সমস্যাও দেখা যায়।

বর্তমানে ডিগ্রি কলেজ পর্যায়ে সভাপতি হওয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের একাডেমিক ডিগ্রির কোন উল্লেখ নেই। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রমার্জন করা হয়েছে। আর অন্যদের বেলায় ডিগ্রি কলেজের সভাপতি হতে গেলে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। আর সদস্যদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন উল্লেখ নেই। বাস্তবের সঙ্গে বিষয়টি কেমন যেন খাপ খেতে চায় না। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকরা কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। সেক্ষেত্রে সভাপতি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে বিষয়টি কেমন যেন দেখায়। মাঝেমধ্যে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো বেশি চোখে পড়ে। কারণ রাজধানীর এ দুই প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দুর্নীতি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম নয়।

সূত্রমতে, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ রানার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে জেলা প্রশাসনের তদন্তে। গত ১১ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বরিশালের বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. সেলিম মৃধার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে গত ২৪ ডিসেম্বর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চুউরিয়া মুন্সী রহিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এ ব্যাপারে গত ৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

রাজধানীর তেজগাঁও মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলেনা খাতুনের বিরুদ্ধে ভবন নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজে অর্থ তসরুপের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে গত ১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জিরুইন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম এবং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি এই অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ছায়েদুল ইসলাম। এই অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিলেটের বিয়ানিবাজার উপজেলার মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবদুল আলিম কম বয়সে দাখিল পাস করেছেন, এছাড়া প্রয়োজনীয় নির্ধারিত অভিজ্ঞতা ছাড়াই উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে প্রমাণ না হওয়ায় গত বছর ১১ নভেম্বর তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈইড় তাড়াশিয়াপাড়া দাখিল (ভোকেশনাল) এবতেদায়ি বিভাগ, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অন্য একটি স্কুলের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হলো। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাস্থ এই স্কুলটির নাম ঘোড়াশাল আ. করিম উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটিতে আমি আমার শৈশব ও কৈশরে লেখাপড়া করেছিলাম। আমার পূর্বেও অনেকেই সেখানে লেখাপড়া করেছেন। এই স্কুলের লেখাপড়ার সুবাদে তাদের অনেকেই ভালো ফলাফল করেছেন। তাদের অনেকেই কর্মজীবনে ভালো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ লাভ করে শিক্ষকতা করে আসছেন। কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠানটির বেহাল দশা। স্কুল ভবন ধ্বসে যাচ্ছে। কারও এদিকে কোন নজর নেই। অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলের ফলাফল কোন রকম-কোন মানের নয়। যাকে দায়সারা গোছের বলা ভালো। বেশিরভাগ কোন রকমে উত্তীর্ণ হওয়ার ছাত্রছাত্রী আজ বেকারত্বের গ্লানিতে হতাশায় নিমজ্জিত। স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হওয়াদের মধ্য থেকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী নাই বললেই চলে।

কারিগরি, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বঞ্চিত। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিযোগিতার অভাবসহ কোন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমের অভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত। নির্মম অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার এই প্রতিষ্ঠানটি একটি একতলা ভবন নির্মাণ অনুমোদনের সুযোগ লাভ করেছে। জানা যায় যে, এখানে তদারকি ও মনিটরিং এর অভাবে ঠিকাদার ইচ্ছেমত কাজ করছে। এগুলো দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে মনে হয়। ইতিপূর্বে বিএনপির আমলে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ হয়েছিল। কয়েক বছরের ব্যবধানে তা এখন জরাজীর্ণ ও পুরাতন ভবনে পরিণত হয়েছে। অতিসম্প্রতি এলাকার স্বার্থান্বেষী মহল প্রধান শিক্ষককে চাপের মুখে ঘোড়াশাল গ্রামের এক ব্যক্তিকে প্রধান করে একটি আহ্বায়ক কমিটির প্রস্তাব কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করে। বিষয়টি বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ড তা না করে উক্ত আহ্বায়ক কমিটিকে অনুমোদন প্রদান করে। যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনুকরণীয় খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যা আদর্শগত শিক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা আশা করি এ জাতীয় বিষয়গুলিতে কর্তৃপক্ষীয় নজরদারি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যা ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা প্রদান করবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহমদ: কলামিস্ট ও গবেষক 

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037271976470947