করোনা দুর্যোগে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো মূলত হুমকির মুখে। বিশেষ করে জাতির মেরুদ- শিক্ষা ব্যবস্থায় এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে সবার আগে বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষা কার্যক্রম কবে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে তা বলা মুশকিল। প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয় পক্ষ থেকেই। করোনার দুঃসময়ে ছাত্রছাত্রীরা সেভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতেও পারছে না। বুধবার (১৯ আগস্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, অনলাইনভিত্তিক ক্লাসও কোনভাবেই সর্বজনীন হয়নি। কেউ হয়তবা পেরেছে, অন্যরা ধারে কাছে যেতেও ব্যর্থ। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দও করোনাকালে চরম ক্রান্তিকাল পার করছেন। তারাও তাদের নিয়মিত কর্মযোগের টানাপোড়েনের অসহনীয় দুরবস্থাকে সামনে নিয়ে এসেছেন। আবার অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়ঙ্কর সঙ্কটকাল পার করছেন। কারও বেতন কমে যাওয়া কিংবা চাকরি হারানোর মতো যন্ত্রণাও পোহাতে হচ্ছে। অনেক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার দুর্দশাও উঠে এসেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক এবং অভিভাবক- দুই পক্ষই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিউশন ফি বাবদ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তেমন আদেশ অভিভাবক ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। তবে এমন নির্দেশ কারও পক্ষ থেকে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইতোমধ্যে শিক্ষকরা ফি আদায়ের জন্য হিসাব শাখাও খুলে বসেছেন। গত ছয় মাস বন্ধ থাকার পরও পুরো টিউশন ফি দাবি করছে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও শিক্ষার্থীদের জন্য কোন ক্লাস তারা নেননি।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি শিক্ষক-অভিভাবক উভয়ের কাছেই অনুরোধ করেছিলেন মানবিক বিচারবোধ আর উপস্থিত সঙ্কটকে গুরুত্ব দিয়ে টিউশন ফির মতো প্রাসঙ্গিক অর্থযোগকে বিবেচনা করার জন্য। সেখানে সবাইকে কিছু ছাড় অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের ওপর মাত্রাহীন ফি আদায়ের চিত্র দৃশ্যমান হয়েছে। করোনা দুর্যোগে প্রথম তিন মাস ফি দিতে না পারায় সেখানে জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে, যা মানবিক বিচারবুদ্ধিতে মানা কঠিন। টিউশন ফি মওকুফের আবেদন জানালেও তা স্কুল কর্তৃপক্ষ মেনে নেয়নি। বরং অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ লাগাতার মুঠো ফোনে বার্তা পাঠিয়ে ফি আদায়ের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। কিছুটা কম নেয়ার আবেদনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমলে নিচ্ছে না। এই মুহূর্তে ছয় মাসের বকেয়া ফি দেয়া অনেকের পক্ষে দুঃসাধ্য। করোনাকালের এমন দুর্যোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই দৃশ্যমান। সুতরাং অনেক ভেবেচিন্তে পরিস্থিতিকে সামাল দেয়াও অত্যন্ত জরুরী। অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দের দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সঙ্কটকে মোকাবেলা করা সময়ের দাবি। অভিভাবকদের বক্তব্য, অর্ধেক করে এই টিউশন ফি নেয়া হোক। মন্ত্রণালয়ও তাদের নির্দেশনায় ফি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তা মানছে না। সে অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।