পুরনো দিনে রাজা বা জমিদাররা তাদের এলাকায় শিক্ষাপ্রসারের লক্ষ্যে নিজস্ব জমিতে স্কুল গড়ে তুলত। সেখানে নিয়োগ দিতো নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদের। কখনো জমিদার পরিবারের লোকজনই বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াতো। এ প্রথা চলেছে বহুকাল। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরও এ অঞ্চলে যারা শিক্ষকতা পেশায় আসত তারা ছিল বিদ্যানুরাগী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো বিতরণের জন্য তারা নিবেদিত ছিল।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা এমনভাবে পাঠদান করত, যার ফলে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীকে খুব একটা পড়তে হতো না। প্রয়োজনে যেকোনো সময় শিক্ষকের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া যেত। ক্লাসের বাইরে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশের সুযোগ করে দিতো। হঠাৎ শিক্ষার্থীদের মাথায় কোচিং নামক ভূত চাপিয়ে দেওয়া হলো। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠল কোচিং সেন্টার।
শিক্ষায়তনের লেখাপড়া চলে গেল কোচিং সেন্টার আর প্রাইভেট টিউটরের হাতে। সন্তানকে কোচিং সেন্টারে পাঠানো আজ মা-বাবার কাছে বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে, আবার অনেকে বাধ্য হচ্ছে। সাধারণত স্কুল-কলেজে চাকরিরত শিক্ষকরা এসব কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেন। অনেক শিক্ষক বাসায় নিয়মিত ব্যাচ করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। যত বেশি শিক্ষকের কাছে কোচিং করা, তত বেশি ভালো ফল—এটাই যেন আজ নিয়ম হয়ে গেছে। সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি মা-বাবা, অভিভাবকের হতে হবে যত্নশীল। তাদের সন্তানরা যেন কোচিংয়ের ফাঁদে পা না দেয়। নিজ পেশার প্রতি শিক্ষকদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নির্লোভ, যোগ্যতাসম্পন্ন, অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা শ্রেণিকক্ষে সুষ্ঠু পাঠদান নিশ্চিত করতে পারলে কোচিং বাণিজ্যের প্রবণতা দূর হবে।