প্রাথমিকের পদোন্নতি: বইছে সুবাতাস - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকের পদোন্নতি: বইছে সুবাতাস

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

আজ দীর্ঘ নয় বছর পর প্রাথমিকের পদোন্নতির কার্যক্রম গ্রহণের ফলে শিক্ষক সমাজের মাঝে বইছে আনন্দের সুবাতাস। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগে কেন মানব সৃষ্ট এ দুর্যোগে হাজার হাজার শিক্ষক দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে খানিকটা মর্যাদা নিয়ে অবসরে যেতে পারলেন না। আজ এ মূহুর্তে সে গানের চরণটির কথা মনে হলো: “আশায় আশায় জীবন গেলো আশা পূরণ হলো না” নিরাশ হয়ে বিষন্ন মনে তাদের অবসরে চলে যেতে হলো।

বাংলাদেশে অন্য কোন পেশাজীবী বা সরকারি কর্মচারির ক্ষেত্রে এতো দীর্ঘ সময় পদোন্নতি বঞ্চিতর ঘটনা বিরল। খোড়া অজুহাত দেখিয়ে মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ পদোন্নতির অধিকার ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা শুধু শিক্ষক সমাজকে বঞ্চিত করেননি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ করছে তৃণমূলের গরিব মানুষের সন্তানদের শিক্ষা। হাইকোর্টে মামলা এ প্রলাপ বকতে বকতে পার করলো দীর্ঘ সময়। মামলাকারিদের ডেকে মামলার বাস্তবতা জেনে নিরসন করার প্রয়াস খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি।

এক ঘেয়েমী মনোভাব নিয়ে ও সময়ক্ষেপণ করে প্রাথমিকের বেহাল দশা আজ শীর্ষস্থানে। ২৩ মে ২০১৭ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় শাখা ২ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ঢাকা শহরের ৮৭ জন সহকারি শিক্ষককে শূন্য পদে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর পদোন্নতি বন্ধ থাকায় প্রায় সকল শিক্ষকের বয়স ৫৫ এর উর্ধে। কারো কারো ২০১৭ সালের মধ্যে অবসর গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাদের অধিকাংশ বয়স্ক মহিলা। অথছ তাদের পদায়ন করা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে একাধিক থানা দুরত্বে। তাদের বাসস্থান থেকে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ করে সকাল সাড়ে সাতটার পূর্বে বিদ্যালয়ের অবস্থান করে প্রসাশনিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে শিশু শিক্ষা মারাত্তক ভাবে বিঘ্নিত হবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা মানহীন থেকে প্রাণহীনে রুপান্তরিত হতে বাধ্য।

দীর্ঘ সময়ের পর হলেও সরকারের মহতি উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। দূর দূরান্তে শিক্ষকদের পদায়ন ব্যবস্থা অবিলম্বে রহিত করে বাসস্থানের যতদূর সম্ভব কাছাকাছি পদায়ন করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ শিগগির দূর করা প্রয়োজন। আজ যেন প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের মূখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া ও অধিকার হরণ করা। এ ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার যে বেহাল দশা দাড়িয়েছে এ উপলদ্ধিবোধটুকু তাদের মাঝে দৃশ্যমান নহে। ঢাকা শহরে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি ও পোষ্যদের কোটা হরণের নিমিত্তে দুই বছর পূর্বে শুরু হয় গ্রামঞ্চল থেকে সহকারি ও প্রধান শিক্ষক বদলির হিড়িক।

প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহবানে ঢাকা মহানগরী শিক্ষকরা আন্দোলন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি পেশের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পরে স্থগিত হলো মন্ত্রণালয়ের বদলির ক্ষমতা ও বর্তমান ঢাকাসহ সর্বত্র প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি। উক্ত স্মারকলিপি বদলির পাশাপাশি সহকারি শিক্ষকদের পদোন্নতির দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মামলা ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া, শিক্ষকদের ছুটির তালিকা সংশোধন করে গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন রেখে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর পর প্রাপ্তি ও প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটির আধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমত: শিক্ষকদের অধিকার হরণের কথা শুনতে ও জানতে অভ্যস্থ নয়। ভাবখানা এমন শিক্ষকদের আধিকার হরণের জন্য তারা নিয়োজিত। শিক্ষা ও শিক্ষকদের সমস্যা পাশ কাটানোর ক্ষতির দায় জাতিকে বহন করতে হয়। রাষ্ট্র স্বীকৃত প্রদত্ত পদোন্নতি, পোষ্যদের চাকরি, অন্যান্য সরকারি কর্মচারির মত শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর পর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, প্রধান শিক্ষকদের হাতে সংরক্ষিত ছুটির ক্ষমতা না দেওয়া আধিকার হরণের মত কাজ।

প্রাথমিক শিক্ষকদের নন ভেকেশনাল কর্মচারির মত সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট চূড়ান্ত শুনানীর অপেক্ষামান তালিকায়। শিক্ষকদের সকল অধিকার আন্দোলনে শিক্ষক সংগঠন গুলোর নিরবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক সংগঠনগুলোও অন্য সরকারি কর্মচারিদের মতো সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়গুলো নিয়ে এগিয়ে আসবেন।এ প্রত্ত্যশা রইলো।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহ্বায়ক প্রাথমিক শিক্ষক আধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

 

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041739940643311