প্রাথমিকে টাইমস্কেল কেলেঙ্কারি, ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকে টাইমস্কেল কেলেঙ্কারি, ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক প্রধান শিক্ষককে উচ্চতর স্কেল (টাইমস্কেল) দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাইমস্কেল দিয়ে দুইজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন; এতে সরকারের কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বুধবার অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আজকালের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নূরুজ্জামান মামুন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন, প্রথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা ও ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) আলেয়া ফেরদৌস (শিখা)।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, বিধি মোতাবেক টাইমস্কেল দিয়েছি। মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর ব্যাখ্যা চাইলে জবাব দেব। আমি মাত্র দুই মাস দায়িত্বে থাকাকালে আগের ডিডির মতো টাইমস্কেল দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘুষে নেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়। নিয়মকানুন মেনেই সব করা হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসির মোবাইলে একাধিবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদটি তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ছিল ১৩তম ও প্রশিক্ষণবিহীনদের ১৪তম। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বেতন নির্ধারণ করা হয় ১১তম গ্রেড ও  প্রশিক্ষণবিহীনদের ১২তম।
 
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর সিলেকশন গ্রেড স্কেল ও উচ্চতর স্কেল (টাইমস্কেল) বা কোনো স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর পর এক বছর পরে পরবর্তী উচ্চতর বা টাইমস্কেল প্রদান-সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তি করে সরকার। নতুন করে জারি করা বিধানে বলা হয়েছে, কোনো স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে ১০ বছর পূর্তিতে এবং চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তি উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন। স্থায়ী কর্মচারী  চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির পরবর্তী  ছয় বছরে পদোন্নতি প্রাপ্ত না হলে সপ্তম বছরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তি উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্ত হবেন। চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত এই ধারা প্রযোজ্য হবে।

এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের টাইমস্কেল প্রদানের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, টাইমস্কেল দিতে হলে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা থাকতে হবে। কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত দেবেন। এই বিধান অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল প্রাপ্তির সুযোগ নেই বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার পর তাদের বেতন স্কেলের দুটি ধাপে উন্নীত করা হয়েছে। একই গ্রেডে আট বছর চাকরির সময় অতিক্রান্ত না হওয়ায় নতুন টাইমস্কেল দেয়ার সুযোগ নেই।

কিন্তু নীতিমালা লঙ্ঘন করে গত বছরের ১১ জুলাই দুটি পৃথক আদেশে রাজবাড়ি জেলার সদর উপজেলার ২৮ জন, ২ জুলাই আলাদা আদেশে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ১৯ জন, ২৭ জুন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দুইজন ও কিশোরঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার একজন, ১৪ জুলাই টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার ৯ জন ও ঘাটাইল উপজেলার ১০ জন, ৪ জুলাই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১৩ জন, ২৬ জুন টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার ২৯ জন ও সখিপুর উপজেলার ১২ জন, ২৫ জুন পৃথক আদেশে মানিকগঞ্জের ২২ জন, ১১ জুলাই পৃথক আদেশে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের ১৩ জন, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১৯ জন প্রধান শিক্ষককে টাইমস্কেল দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা।

গত ২ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার কয়েকজন শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়েছে, ডিপিইও আলেয়া ফেরদৌসির যোগসাজশে ঢাকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিডির দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী রেজা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুুষ নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের টাইম স্কেল দিয়েছেন। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। তদন্ত করে সরকারি অর্থ আদায়সহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল প্রতিমন্ত্রী অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহে সংযুক্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক গতিশীলতা ও সেবার মান বাড়াতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল প্রদানের ক্ষমতা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালকদের দিয়ে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকরা (ডিডি) এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির দ্বিতীয় শ্রেণির তথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান অথবা তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কর্মরত থাকাকালে কর্মকাল একত্রে মিলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দিতে পারবেন কি না, স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চান।

এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিত টনক নড়ে মন্ত্রণালয়ের। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদানের বিষয়ে গত ২৭ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মো. বদরুল হাসানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা করে উপপরিচালকদের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেওয়ার ক্ষমতা স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আগের চিঠির পরে কোনো প্রধান শিক্ষককে টাইমস্কেল দিলে সে আদেশ স্থগিত করার নির্দেশা দিয়ে চিঠি দেন। চিঠি উপেক্ষা করে দুই কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেন।

সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038318634033203