সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত ফলে মহিলার চেয়ে বেশি পুরুষ শিক্ষক নির্বাচিত করা হয়েছে। অথচ মহিলা শিক্ষকের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা নির্ধারিত রয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ১৮ হাজার ১৪৭ জন প্রার্থী নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে মহিলা শিক্ষক ৮ হাজার ৫৭০ জন যা মোট প্রার্থীর ৪৭ শতাংশ।আর পুরুষ প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৫৭৭ জন যা উত্তীর্ণ প্রার্থীর ৫৩ শতাংশ। ৬০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী নির্বাচিত হলে তাদের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৮৮ জন হওয়ার কথা । সে হিসেবে ২ হাজার ৩১৮ জন মহিলা প্রার্থী কম নির্বাচিত হয়েছেন।
বিভিন্ন জেলার পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬১ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলায়ই ৬০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মাত্র ছয়টি জেলায় এই সংখ্যা পূরণ হয়েছে। হয়নি। মহিলা কোটা পূরণ হয়নি দাবি করে ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনও দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার মহিলা প্রার্থীদের কোটা পূরণ না হওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত এই রিটের শুনানি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। ১০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বুধবার নীলফামারী ও বরগুনার চূড়ান্ত ফল ছয় মাসের জন্য স্থগিত এবং ফল বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট । এই দুটি জেলায়ও মহিলা কোটা পূরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেয়। ফলে এ নিয়োগ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নারী শিক্ষক কম নির্বাচন করা হলেও বিধিমালার ব্যত্যয় হয়নি। কারণ ঐ সব জেলায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। তারা নিয়োগ নীতিমালার দ্বিতীয় অংশের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, নীতিমালায় বলা আছে—যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ প্রার্থীদের দ্বারা পূরণের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, রুলের জবাব দেওয়া হবে। যে উপজেলায় ফল নিয়ে রিট পিটিশন হয়েছে শুধু সেসব জেলার নিয়োগ ছাড়া অন্য কোথাও নিয়োগে বাধা আছে বলে মনে করি না।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১ হাজার ৭৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ১৯ জন। আর মহিলা ৭৪৭ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলায় ৩ হাজার ৮২৫ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পুরুষ নির্বাচিত হয়েছেন ২ হাজার ১৮৩ জন। আর মহিলা ১ হাজার ৬৪২ জন।
ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে মাত্র ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় নারী কোটা পূরণ হয়েছে। বাকি ৯টি জেলায় পূরণ হয়নি। ৩ হাজার ৭১৩ জন নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৮ জন নারী এবং ১ হাজার ৭০৫ জন পুরুষ। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ১ হাজার ৯৪৯ জন নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে ৮৮৮ জন মহিলা এবং ১ হাজার ৬১ জন পুরুষ। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ১ হাজার নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে ৫০৮ জন মহিলা এবং ৪৯২ জন পুরুষ। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ২ হাজার ৪২২ জন নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২৯১ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ১৩১ জন মহিলা। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার সব কটিতেই মহিলার চেয়ে বেশি পুরুষ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিভাগে ১ হাজার ৯০৯ নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৪ এবং মহিলা ৮৩৫ জন। আর সিলেট বিভাগের চিত্র একই। ১ হাজার ৫৩৬ শিক্ষকের মধ্যে মহিলা ৮১১ জন এবং পুরুষ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ৭৫২ জন।
গত বছরের ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সারাদেশ থেকে ২৪ লাখ প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেন। চার ধাপে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাশ করেন। এই পরীক্ষায় ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জন নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন শিক্ষকদের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করার কথা।